দীর্ঘ এক বছর চার মাস পেরিয়ে গেলেও আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের বিএনপি নেতা কামাল হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিম্ন আদালতে হাজির না হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, এক বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রধান আসামি স্বাধীন আলী প্রকাশ্যে চার দিন অবস্থান করলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি।২০২২ সালের ৯ই মে দিবাগত রাতে আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জের বিএনপি নেতা কামাল হোসেনকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। কামাল হোসেন স্থানীয় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও একজন ঠিকাদার ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত কামাল হোসেনের সঙ্গে মুন্সিগঞ্জের মৃত মোতাহার হোসেন ও তোফাজ্জল মিয়ার শরিকানা জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। মৃত মোতাহার হোসেনের ঘরজামাই স্বাধীন আলী এই বিরোধে যুক্ত হন। ঘটনার দিন সকালে কামাল হোসেনের সঙ্গে স্বাধীন আলী ও তরিকুলের গণ্ডগোল হয়, এবং ঐ রাতেই তোফাজ্জল হোসেনের সেজো ছেলে তরিকুল ইসলাম, স্বাধীন আলী, ইসমত আরা বিউটি, সাইমা নিগার, আশিকুর রহমান বাদশাহ, স্বাধীনের কফি হাউজের কর্মী রাহুল কুমার দাস ও রফিক (জিন্দাপীর) মিলে অমানুষিক নির্যাতন করে এবং কুপিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করে বিএনপির এই দূরদর্শী ভোট মেকার নেতাকে। চুয়াডাঙ্গাসহ আলমডাঙ্গার বিএনপির অনেক নেতা তাকে উস্তাদ বলে সম্বোধন করতেন এবং কেউ কেউ তাকে বিএনপির থিংক ট্যাংক হিসেবে সম্মান করতেন। এছাড়াও তিনি জেহালা ৭ নং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদারদের মধ্যে একজন ছিলেন।কামাল হোসেনের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বাদী হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি স্বাধীন আলী এক মাস পলাতক থাকার পর মামলার অন্য দুই আসামি ইসমত আরা বিউটি ও সাইমা নিগারসহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। কিন্তু জামিন নেওয়ার পর থেকে স্বাধীন আর আদালতে হাজির হননি। ফলে ২০২৩ সালের ১৪ মে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জজ আদালত স্বাধীন আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পুলিশের উদাসীনতাহ, হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি স্বাধীন আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি গত ২০ সেপ্টেম্বর তার শ্যালিকার বিয়েতে চার দিন উপস্থিত থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। নিহত কামাল হোসেনের পরিবার পুলিশের এই অবহেলার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে,নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, “স্বাধীন আলী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অথচ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। স্বাধীনসহ অন্যান্য আসামিরা প্রতিনিয়ত জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে নিহতের পরিবারকে। মামলা তুলে না নিলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এতো দিনেও গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে দুঃখজনক ও ভীতিকর।”
এছাড়াও, তারা অভিযোগ করেন যে কামাল হোসেনকে খুন করার পরও তারা ক্ষান্ত হয়নি। কামাল হোসেন মারা যাওয়ার ১৯ দিনের মাথায় মৃত কামালের ছেলের নামে তোফাজ্জল হোসেন এবং তার সেজো ছেলে তরিকুল ইসলামের যোগসাজশে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করা হয়।