**চুয়াডাঙ্গায় সাবেক জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদের একদিনের সফর: পুরানো স্মৃতি রোমন্থন**
ইসলাম রকিব (১১-১১-২৪): **”যিনি গাছ লাগান, তিনিই গাছের দুঃখ-কষ্ট বোঝেন,”** — এই কথাটি এক বৃক্ষপ্রেমী মানুষের, আর চুয়াডাঙ্গার সাবেক জেলা প্রশাসক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদের জন্য যেন এক জীবনদর্শন হয়ে উঠেছিল। তাঁর হাত ধরেই চুয়াডাঙ্গা জেলার পরিবেশ ও উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ হয়েছিল। গত ১০ নভেম্বর, একদিনের সরকারি সফরে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে এসেছিলেন তিনি, এবং তার হাতের স্পর্শে গড়া বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পাশে দাঁড়িয়ে একসময়কার সেই স্মৃতি রোমন্থন করে, চোখের পানিও ফেলেছিলেন নিরবে।
### **বৃক্ষপ্রেমী জেলা প্রশাসক: চুয়াডাঙ্গায় এক নতুন জেগে ওঠা**
জিয়াউদ্দীন আহমেদ জেলা প্রশাসক থাকাকালে একদিকে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতেন, তেমনি তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার পরিবেশের উন্নতিতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, খেলার মাঠের উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির নানা প্রকল্প। একদিনে সাত লাখ তাল বীজ রোপণ করে তিনি রেকর্ড গড়েছিলেন, এবং চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা সহ বহু অবকাঠামো উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল অমূল্য।
নদীর গতিপথ স্বাভাবিক করা, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল বিরোধী কঠোর অভিযান, চুয়াডাঙ্গার ব্যান্ডিং ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের উন্নয়ন—এগুলো ছিল তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বের উদাহরণ। এছাড়া, তিনি জেলা শহরের বাসিন্দাদের বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণ, টপ সয়েল বা অবৈধ বালী উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, ডিসি ইকো পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, শিশু-কিশোর সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য ফান্ড গঠন সহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রকল্পেও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
### **স্মৃতি রোমন্থন: চোখের অশ্রু**
চুয়াডাঙ্গায় দীর্ঘদিন পরে ফিরে এসে, সেই সময়ের স্মৃতিগুলোর সাথে একে একে দেখা করতে গিয়ে, তার মন পুরনো অনুভূতিতে ভরে উঠেছিল। তিনি ফিরে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ছাদ বাগানে, যেখানে তিনি নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন ফুলের বাগান, শাপলা পুকুর, বিদেশি কলার বাগান, এমনকি বাচ্চাদের খেলার জন্য ব্যাডমিন্টন কোর্টও তৈরি করেছিলেন। এসবের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি যেন ফিরে দেখছিলেন নিজের হাতে গড়া ঐতিহাসিক স্মৃতিগুলোর দিকে। সেই সময়ে, তাঁর কর্মব্যস্ততার পরেও, ছাদ বাগানে বসে বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতেন।
### **বিদায় বেলার স্মৃতি**
যখন তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে বদলি হয়ে মন্ত্রণালয়ে চলে যান, তখন প্রায় ২০ দিন ধরে গোটা শহরটি ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছিল। চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মচারী, ব্যবসায়ী—সবাই তাঁকে ফুলের বুকে বিদায় দিয়েছিল। সেদিন রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে চুয়াডাঙ্গার মানুষের অশ্রু সজল চোখ দেখে তিনি জানতেন, এই শহরের মানুষের হৃদয়ে তাঁর স্থান অমলিন থাকবে।
আজ, দীর্ঘদিন পর যখন একদিনের সফরে ফিরেছেন, তিনি আবার সেই সব জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন যেখানে তিনি একসময় কাজ করেছিলেন। পুরানো স্মৃতির সাথে আবার দেখা করতে গিয়ে চোখের কোণে পানি চলে আসে। তাঁর ছোঁয়া লেগে যাওয়া প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প, প্রতিটি স্মৃতি, যেন সজীব হয়ে ওঠে।
### **তাঁর মনে এখনো বেঁচে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা**
জিয়াউদ্দীন আহমেদ চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক থাকাকালীন যে কর্মচারীদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, তাদের কথা একে একে স্মরণ করে বলেন—শাহিলুল্লাহ কয়েন, শহিদুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, আশরাফুল, ইসলাম রকিব, পিন্টু, তাঁদের সাথে এখনও যোগাযোগ রাখেন। সেই সময়ে, জেলা প্রশাসন চত্বরের একটি ঝুঁকিপূর্ণ মেহগনি গাছ অপসারণ করার পরিকল্পনা হয়েছিল, কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে, বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে, তিনি জানতে চান—”সেই গাছটি কি অপসারণ করা হয়েছে?” কর্মচারীরা জানান, নানা জটিলতার কারণে তা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি।
### **চুয়াডাঙ্গা বাসীর প্রতি ভালোবাসা**
সরকারি সফরে এসে, চুয়াডাঙ্গার সাবেক জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ যেন আবার তার পুরানো শহরের আত্মায় ফিরে গিয়েছিলেন। তিনি মনের অজান্তেই বলেছিলেন, **”মোর পরিচয় এই হোক, আমি তোমাদেরই লোক!”** কথাগুলি যেন চুয়াডাঙ্গার মানুষের প্রতি তাঁর নিঃশর্ত ভালোবাসারই প্রতিফলন।
বর্তমানে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) হিসেবে কর্মরত, কিন্তু চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা তাঁর হাতের কাজগুলো এখনও তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়, এক সফল জেলা প্রশাসক হিসেবে তাঁর ইতিহাস।