০৫:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দামুড়হুদায় আগাম খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

  • Update Time : ১২:১৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩
  • 117

 

কড়া নাড়ছে শীত। দিনে গরম সন্ধ্যা হলেই শীতের আগমন বার্তা কুয়াশার সঙ্গে শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালের শিশির ভেজা ঘাস জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। অনেকেই রাতে ফ্যানের হাওয়া (বাতাস) খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আর যারা ফ্যানের হাওয়া খাচ্ছেন তারা কাঁথা বা পাতলা কম্বল ব্যবহার করছেন। আর এ সবই জানান দিচ্ছ শীত আগমনের বার্তা।

এরই মধ্যে জেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ তুলতে শুরু করেছেন। শীত আসতে না আসতে চুয়াডাঙ্গা জেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কে কত আগে, খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় চলছে চুয়াডাঙ্গার গাছিদের মাঝে। খেজুর গাছ থেকে বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করতে পারদর্শী তাদেরকে গাছি বলা হয়।

শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাছাছোলা করছেন। শীতের মৌসুম মানেই খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো পাড়া মহল্লা। আর শীতের সকালে ঠান্ডা খেজুর রসের তৃপ্তি-ই আলাদা।

এছাড়া খেজুর রসের ক্ষীর পায়েসের মজাই না-ই বা বলা হল। প্রতিদিন গ্রামের কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রসের খাবারের আয়োজন চলে। খেজুরের শুধু রসই নয়, পাটালি, নলেন গুড় ছাড়া জমেই ওঠে না। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেওয়া। তার সপ্তাহ খানেক পর বাঁশের তৈরি নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের কাজ।

আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।
আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে-অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছ জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদ। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে জেলার কয়েক হাজার পরিবার।

খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলায় যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা নিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয় এ জেলার গুড়-পাটালি। দেশের বাইরেও এর বেশ কদর রয়েছে।

আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।
আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।

শীত মৌসুম খেজুরের রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত বাড়বে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এখানকার কারিগরদের দানা গুড়, পাটালি গুড় তৈরিতে ব্যাপক সুনাম থাকায় খেজুরের গুড় পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।

দামুড়হুদা উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের শাহাদত হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ২০০ গাছ থেকে খেজুরের রস আহরণ করবেন। খেজুর গাছের রস, গুড়-পাটালি বিক্রয় করে করে খরচ বাদে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলিত মৌসুমে জেলার ৪ উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে কৃষকরা রস আহরণ (সংগ্রহ) করছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মৌসুম। এই মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, জেলাজুড়ে খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা আগাম খেজুর গাছ গুলো প্রস্তত করছে। সঠিক পদ্ধতিতে, স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে যেন রস-গুড় উৎপাদন করে গাছিরা-এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।

আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।
আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা

তিনি আরো জানান, ভোক্তারা যাতে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে প্রস্তুত খেজুরের রস-গুড় পেতে পারে এজন্য কাজ করে করে থাকে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ। মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে গড়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে। এছাড়া গাছিরা খেজুর রস-গুড়ের বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি করে নিকটস্থ বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে

Tag :
জনপ্রিয়

মুন্সিগঞ্জ রেলস্টেশনে টাকা চুরি হওয়া জোছনা পাগলীর পাশে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এন্ড সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন

দামুড়হুদায় আগাম খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

Update Time : ১২:১৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

 

কড়া নাড়ছে শীত। দিনে গরম সন্ধ্যা হলেই শীতের আগমন বার্তা কুয়াশার সঙ্গে শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালের শিশির ভেজা ঘাস জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। অনেকেই রাতে ফ্যানের হাওয়া (বাতাস) খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আর যারা ফ্যানের হাওয়া খাচ্ছেন তারা কাঁথা বা পাতলা কম্বল ব্যবহার করছেন। আর এ সবই জানান দিচ্ছ শীত আগমনের বার্তা।

এরই মধ্যে জেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ তুলতে শুরু করেছেন। শীত আসতে না আসতে চুয়াডাঙ্গা জেলার গাছিরা আগাম খেজুর গাছ পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কে কত আগে, খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় চলছে চুয়াডাঙ্গার গাছিদের মাঝে। খেজুর গাছ থেকে বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করতে পারদর্শী তাদেরকে গাছি বলা হয়।

শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন। গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাছাছোলা করছেন। শীতের মৌসুম মানেই খেজুর গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে ওঠে পুরো পাড়া মহল্লা। আর শীতের সকালে ঠান্ডা খেজুর রসের তৃপ্তি-ই আলাদা।

এছাড়া খেজুর রসের ক্ষীর পায়েসের মজাই না-ই বা বলা হল। প্রতিদিন গ্রামের কোনো না কোনো বাড়িতে খেজুর রসের খাবারের আয়োজন চলে। খেজুরের শুধু রসই নয়, পাটালি, নলেন গুড় ছাড়া জমেই ওঠে না। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেওয়া। তার সপ্তাহ খানেক পর বাঁশের তৈরি নোলন স্থাপনের মাধ্যমে শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের কাজ।

আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।
আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রতিটি মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে-অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছ জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদ। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে জেলার কয়েক হাজার পরিবার।

খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলায় যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা নিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয় এ জেলার গুড়-পাটালি। দেশের বাইরেও এর বেশ কদর রয়েছে।

আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।
আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।

শীত মৌসুম খেজুরের রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত বাড়বে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

এখানকার কারিগরদের দানা গুড়, পাটালি গুড় তৈরিতে ব্যাপক সুনাম থাকায় খেজুরের গুড় পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।

দামুড়হুদা উপজেলার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের শাহাদত হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ২০০ গাছ থেকে খেজুরের রস আহরণ করবেন। খেজুর গাছের রস, গুড়-পাটালি বিক্রয় করে করে খরচ বাদে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভের আশা করছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলিত মৌসুমে জেলার ৪ উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে কৃষকরা রস আহরণ (সংগ্রহ) করছে। যার প্রায় অর্ধেকই সদর উপজেলায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে গুড়ের মৌসুম। এই মৌসুমে গড়ে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, জেলাজুড়ে খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছিরা আগাম খেজুর গাছ গুলো প্রস্তত করছে। সঠিক পদ্ধতিতে, স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে যেন রস-গুড় উৎপাদন করে গাছিরা-এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।

আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করেত শুরু করেছেন।
আগাম রস পাবার আশায় অধিকাংশ এলাকার গাছিরা

তিনি আরো জানান, ভোক্তারা যাতে স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে প্রস্তুত খেজুরের রস-গুড় পেতে পারে এজন্য কাজ করে করে থাকে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ। মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৬৬ হাজারের মতো খেজুরগাছ থেকে গড়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদিত হবে। এছাড়া গাছিরা খেজুর রস-গুড়ের বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি করে নিকটস্থ বাজারে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে