জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুটি অভিযোগে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় দেন।
রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় তারেক রহমানকে ৩ বছর ও ২৭(১) ধারায় ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে জোবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া তাকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি তারেকের ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রীয় অনুকূল বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ২৭ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ রায়ের দিন ধার্য করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মামলায় আমরা সকল অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।
গত ২৪ জুলাই দুদকের এ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। এদিন দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম সাক্ষ্য দেন। তারপর মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য আজ ২৭ জুলাই দিন ধার্য করেন আদালত। মামলায় মোট ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
জানা যায়, পূর্বে পৃথক চার মামলায় তারেক রহমানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তবে জোবায়দার এটি প্রথম ও একমাত্র মামলার রায় বলে জানিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
মুদ্রা পাচারের মামলায় ২০১৩ সালে তারেক রহমানকে প্রথমে খালাস দিয়েছিলেন ঢাকার আদালত। তবে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের পর হাইকোর্টের রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তার পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। খালেদার হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড, তারেকের হয় ১০ বছর সাজা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার প্রতিটিতে কয়েকটি ধারায় তাকে তিনবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে বিস্ফোরক আইনের আরেকটি ধারায় তার ২০ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়। তবে সবগুলো সাজা একসঙ্গে কার্যকরের উল্লেখ থাকায় তারেককে যাবজ্জীবন সাজা খাটার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা হয়।
এরপর ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে দায়ের হওয়া মানহানি মামলায় তারেক রহমানকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২১ মে মামলার বাদী দুদকের উপ পরিচালক জহিরুল হুদার সাক্ষ্যের মাধ্যমে দুদকের এ মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর মাত্র দুইমাস তিনদিনে এসে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল একই আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এ মামলায় তাদেরকে পলাতক দেখানো হয়েছে। গত বছরের ১ নভেম্বর একই আদালত তারেক ও জোবায়দার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত বছরের ২৬ জুন হাইকোর্ট তারেক ও জোবায়দাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার দুর্নীতি মামলা দায়ের ও তার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিট আবেদন খারিজ করে দেন।
রিট খারিজ করে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট একইসঙ্গে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে যত দ্রুত সম্ভব বিচার কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ রায় পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে মামলার রেকর্ড ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠাতে বলা হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তারেক রহমানের শাশুড়ি মারা যাওয়ায় এই মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।