০৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত মুন্নি হত্যা: ব্ল্যাকমেইলের প্রতিশোধ নিতে শারীরিক সম্পর্কের পর শ্বাসরোধে হত্যা

 

চুয়াডাঙ্গায় খালেদা আক্তার মুন্নি হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি মানিক আলী মুন্সি (২২) এবং তার চাচাতো ভাই পারভেজ মহাসিন স্বপন (১৯) কে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তারা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে।  

 

### **হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা**  

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর মুন্নি বাড়ি থেকে হাটবোয়ালিয়া বাজারে যাওয়ার কথা বলে বের হন। সন্ধ্যায় তিনি মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানান, রাতে আর বাড়ি ফিরবেন না। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।  

 

১৪ নভেম্বর সকালে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি বোয়ালমারী গ্রামের মেহগনি বাগানে নারীর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের পাশে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল নম্বর ও স্বর্ণের দোকানের ক্যাশ ভাউচার উদ্ধার করে। এসব সূত্র ধরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে।  

 

### **গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি**  

১৫ নভেম্বর ভোরে পুলিশ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মানিক ও পারভেজকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে মুন্নি মানিককে গাংনীতে ডেকে নিয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই তারা হত্যার পরিকল্পনা করে।  

 

৯ নভেম্বর বিকেলে তারা মুন্নিকে আলমডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসে। সন্ধ্যায় মেহগনি বাগানে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মানিক, পরে পারভেজ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরপর মুন্নি চুক্তির টাকা চাইলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। লাশ ফেলে রেখে তারা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা, নুপুর এবং আংটি নিয়ে পালিয়ে যায়।  

 

### **মুন্নির অতীত জীবন**  

প্রতিবেশীদের মতে, মুন্নি একজন উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনকারী ছিলেন। পিতৃহীন দরিদ্র পরিবারের এই মেয়েটি যৌবনের শুরুতে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিন বছর আগে পার্শ্ববর্তী গৌরীহৃদ গ্রামের প্রবাসী আসিবের সঙ্গে তার বিয়ে হলেও কিছুদিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর মুন্নি ভারতে গিয়ে একটি বারে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। ছয় মাস আগে দেশে ফিরে তিনি আবারও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।  

 

### **ময়নাতদন্ত ও দাফন**  

ময়নাতদন্ত শেষে ১৫ নভেম্বর রাতে মুন্নির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গার ভাংবাড়ীয়া কবরস্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।  

 

### **উল্লেখযোগ্য তথ্য**  

মুন্নির মা আহারণ নেছা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করলে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।  

 

**পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।**

জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত মুন্নি হত্যা: ব্ল্যাকমেইলের প্রতিশোধ নিতে শারীরিক সম্পর্কের পর শ্বাসরোধে হত্যা

Update Time : ০৪:৫৬:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

 

চুয়াডাঙ্গায় খালেদা আক্তার মুন্নি হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি মানিক আলী মুন্সি (২২) এবং তার চাচাতো ভাই পারভেজ মহাসিন স্বপন (১৯) কে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তারা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে।  

 

### **হত্যাকাণ্ডের পেছনের ঘটনা**  

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর মুন্নি বাড়ি থেকে হাটবোয়ালিয়া বাজারে যাওয়ার কথা বলে বের হন। সন্ধ্যায় তিনি মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানান, রাতে আর বাড়ি ফিরবেন না। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।  

 

১৪ নভেম্বর সকালে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি বোয়ালমারী গ্রামের মেহগনি বাগানে নারীর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের পাশে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল নম্বর ও স্বর্ণের দোকানের ক্যাশ ভাউচার উদ্ধার করে। এসব সূত্র ধরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে।  

 

### **গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি**  

১৫ নভেম্বর ভোরে পুলিশ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মানিক ও পারভেজকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে মুন্নি মানিককে গাংনীতে ডেকে নিয়ে এক ব্যক্তির বাড়িতে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই তারা হত্যার পরিকল্পনা করে।  

 

৯ নভেম্বর বিকেলে তারা মুন্নিকে আলমডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসে। সন্ধ্যায় মেহগনি বাগানে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মানিক, পরে পারভেজ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরপর মুন্নি চুক্তির টাকা চাইলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। লাশ ফেলে রেখে তারা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা, নুপুর এবং আংটি নিয়ে পালিয়ে যায়।  

 

### **মুন্নির অতীত জীবন**  

প্রতিবেশীদের মতে, মুন্নি একজন উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনকারী ছিলেন। পিতৃহীন দরিদ্র পরিবারের এই মেয়েটি যৌবনের শুরুতে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিন বছর আগে পার্শ্ববর্তী গৌরীহৃদ গ্রামের প্রবাসী আসিবের সঙ্গে তার বিয়ে হলেও কিছুদিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর মুন্নি ভারতে গিয়ে একটি বারে নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। ছয় মাস আগে দেশে ফিরে তিনি আবারও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।  

 

### **ময়নাতদন্ত ও দাফন**  

ময়নাতদন্ত শেষে ১৫ নভেম্বর রাতে মুন্নির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গার ভাংবাড়ীয়া কবরস্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।  

 

### **উল্লেখযোগ্য তথ্য**  

মুন্নির মা আহারণ নেছা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করলে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।  

 

**পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।**