মোঃ আব্দুল্লাহ হক চুয়াডাঙ্গা:ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, দূর্নীতিবাজদের গ্রেফতার, অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী সমাজভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বুধবার বেলা ৪ টার সময় চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা সভাপতি হাসানুজ্জামান সজিব এর সভাপতিত্বে বিশাল গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। জেলা প্রচার সম্পাদক আশিকুল আলম সজিবের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি জনাব হাসানুজ্জামান সজিব, সিনিয়র সহ সভাপতি রুহুল আমীন সোহেল, সহ সভাপতি মাও. জহুরুল ইসলাম, সেক্রেটারী মু. তুষার ইসরান সরকার, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ ও আইম্মা পরিষদের জেলা সেক্রেটারী মাও. সাজেদুর রহমান, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের জেলা সভাপতি ডা. জিনারুল ইসলাম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন জেলা সেক্রেটারী মাও. সাইফুল ইসালাম, ইসলামী যুব আন্দোলন জেলা সভাপতি মীর শফিউল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন জেলা সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা পৌর সেক্রেটারী আলমগীর মোল্লা, সদর উপজেলা সেক্রেটারী আলিমুজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা সভাপতি এনামুল কবির জিপসী, আলমডাঙ্গা উপজেলা সভাপতি মাও. আকরাম হোসাইন সাইরাফি, জীবননগর উপজেলা সভাপতি মাও. আব্দুল ওয়াদুুদ, সমাবেশ শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামী আন্দোলন জেলা সদস্য মুফতি আব্দুস সালাম।
বক্তারা বলেন- দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বৈরাচার মুক্ত হলেও এখনো কিছু মানুষ স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। স্বৈরাচার শাসকের সময় যেরকমভাবে বিভিন্ন হাটবাজার, খাল-বিল, স্টিমারঘাট, লঞ্চঘাট লুটপাট করে খেত এখন একদল স্বার্থান্বেষী সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। একাত্তরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দেশ যেরকমভাবে দুর্নীতি থেকে মুক্ত হতে পারে নাই। ঠিক বর্তমানেও ২৪-এ এসেও যদি আমরা নেতা নির্বাচনে ভুল করি তাহলে ৭১ পরবর্তী সময়ের যেরকমভাবে ভুলে মাসুল দিয়েছে আমরা এবারও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই ভুলের মাশুল দিতে হবে। আমরা একই ভুল বারবার করব না। এবার দেশপ্রেমিক জনতাকে সাথে নিয়ে দেশকে নিজেরা গুছিয়ে নেব ইনশাআল্লাহ্।
প্রধান বক্তা অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন ভারত এক স্বৈরাচারকে এদেশের মসনদে বসিয়ে দেশের জনগণের উপর যেরকমভাবে অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়েছিল জনগণ দেরিতে হলেও সেটা প্রতিহত করেছে। এক্ষেত্রে ভারত চরমভাবে হতাশ হয়েছে। হতাশা থেকে প্রতিশোধ স্বরুপ ভারত আমাদের উপর পানি আগ্রাসন চালিয়েছে। কিন্তু দেশের সর্বস্তরের জনতা যেভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মরত প্রত্যেক সদস্য, বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য তাদের একদিনের আয় এবং অনেকে বন্যার্তদের সহযোগিতায় গাড়ি ভাড়া ফ্রি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের স্টাফদের এক দিনের আয় দান করেছেন। তেমনিভাবে দেশের মানবিক সংগঠনগুলো নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ মানবতার সাহায্যের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আমি এই জনতাকে সাধুবাদ জানাই। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো জনতার ঐক্যবদ্ধ হওয়াতে ভারতকে আরো হতাশায় নিমজ্জিত হতে দেখা যাচ্ছে।”
গণসমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, পীর সাহেব চরমোনাই ৯ দফা ঘোষণা বাস্তবায়নে তারা জনমত গড়ে তুলবেন। তাদের এজেন্ডার ভিতরে রয়েছে বিগত সরকারের সকল মন্ত্রী-এমপি এবং নেতাকর্মীদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে। সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্থ যে সকল নেতাকর্মীরা রয়েছে তাদের নির্বাচন করার বৈধতা বাতিল করতে হবে। আগামী নির্বাচনে সংখানুপাতিক (পি.আর) পদ্ধততে নির্বাচন দিতে হবে। কেননা পি.আর পদ্ধতি ছাড়া জনগণের রায়ের সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না।
অন্যান্য বক্তারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড সমালোচনা করেন। শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। তার শাসনামলে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর সেগুলো উদ্ধার করে টাকা পাচারকারী ও দুর্নীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, অবিলম্বে তার দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। ৫ আগস্টে যে সমস্ত পুলিশ সদস্য নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপরে গুলি করেছিল তাদেরও শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান বক্তারা। এরপর সংক্ষিপ্ত দোয়ার মাধ্যমে গণ-সমাবেশের কর্মসূচি শেষ হয়। গণসমাবেশে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলামী আন্দোলন ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন