০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাংনীতে সেতু নির্মাণ হলেও হয়নি সংযোগ সড়ক জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা, জনগনের ভোগান্তি চরমে

  • Update Time : ০২:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • 134

মজনুর রহমান আকাশ: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এক অংশের সংযোগ সড়ক নির্মান হয়নি। এখনো জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আটকে আছে সড়কের কাজ। ফলে ৯ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে গাংনী ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দাদের। তবে বিষয়টি সমাধানে জোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্খানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী। জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বামন্দী এইচডি থেকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের প্রাগপুর জিসি ভায়া মধুগাড়ি ঘাট সড়কের মাথাভাঙা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০সালের ২ ফেব্রুয়ারী। সেতুর ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৯ টাকা। সেতুটি নির্মাণের ফলে মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বাসিন্দারা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন হলেও আজো সংযোগ সড়ক নির্মান করা হয়নি। সেতুটি নির্মানের আগে স্থানীয়রা সংযোগ সড়কের জন্য জমি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর স্থানীয়রা বেঁকে বসেছেন। স্থানীয়দের দাবি, জমি সেতুর জন্য লাগলে দেবেন, তবে এর জন্য ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। তবে এলজিইডি বলছে, বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর দুই জেলার মানুষের জন্য তৈরি (মধুগাড়ি-বেতবাড়িয়া) সংযোগ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দৌলতপুর উপজেলার পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি হলেও গাংনী উপজেলার অংশে এখনো হয়নি। সেতু নির্মিত হলেও এখনো ভোগান্তি দূর হয়নি দুপাড়ের লক্ষাধিক মানুষের। ফলে চিকিৎসাসেবা কিংবা ফসলাদি নিয়ে এপারের মানুষকে ওপারে যেতে হলে ৯ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। মেহেরপুর গাংনী ভবানীপুর গ্রামের ইটভাটা ব্যবসায়ি ওয়াহিদুল হক লিটন জানান, তিনি নদী পার হয়ে মধুগাড়িতে যান ইটের ভাটায়। বছর দশেক ধরেই তিনি যাতায়াত করেন। সেসময় ঘাট ইজারা নিতেন স্থানীয়রা। তখন নৌকা ও ফরাস পাতা ছিল। প্রতদিন ১০ টাকার বিনিম যাতায়াত করতে পারতেন। সেতু নির্মানের পর ইজারদারী প্রথা আর নেই। এখন ৯ কিলোমিটার ঘুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। গাংনী এলাকার অংশে সংযোগ সড়কটি হলে সকলেরই উপকার হতো বলে তিনি জানান। মধুগাড়ির কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি মাইনুল হক জানান, বছর দশেক যাবত তিনি নদী পার হয়ে যাতায়াত করেন। নদীর উপর সেতু নির্মানের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও সেতু নির্মানের পর আর সেটি নেই। সংযোগ সড়ক না থাকায় কোন সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। একই কথা জানালেন, গরু ব্যবসায়ী মুল্লুক মালিথা। তিনি আরো জানান, ৩০ বছর ধরে গরু বেচা কেনা করেন তিনি। আগে নৌকা ছিল কিন্তু সেতু নির্মাণেন পর আর নৌকা চলে না। এখন গাংনী এলাকায় আসতে হলে ৮/৯ মাইল ঘুরে আসতে হয়। সবজি ব্যবসায়ি মধুগাড়ির রবিউল ইসলাম জানান, নদী পার হয়ে সবজি আনতে হয়। সংযোগ সড়ক সংযোগ না থাকায় সবজি বহনকারী ভ্যান রেখে মাথায় করে সবজি আনতে হয়। অতিদ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মানের দাবী জানান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, সেতুর নিচ দিয়ে তাদের প্রায় ৩৫ বিঘা জমি আছে। সেতু হলে মানুষের ভোগান্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জায়গাগুলোর দামও বেড়ে যাবে। তাই ন্যায্যমূল্য পেলে সেতুর সড়কের জন্য জমি দিতে আপত্তি নেই তাদের। গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, সেতু নির্মাণের আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। তবে বর্তমান সেতুর কাজ শেষ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গেলে যারা জমি দিতে চেয়েছিলেন তারা বর্তমানে আপত্তি জানাচ্ছেন। তারা বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দাম চাচ্ছেন। তাই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিগ্রহনের কার্যকলাপ শুরু হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Tag :
জনপ্রিয়

মুন্সিগঞ্জ রেলস্টেশনে টাকা চুরি হওয়া জোছনা পাগলীর পাশে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এন্ড সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন

গাংনীতে সেতু নির্মাণ হলেও হয়নি সংযোগ সড়ক জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা, জনগনের ভোগান্তি চরমে

Update Time : ০২:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মজনুর রহমান আকাশ: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এক অংশের সংযোগ সড়ক নির্মান হয়নি। এখনো জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আটকে আছে সড়কের কাজ। ফলে ৯ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে গাংনী ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দাদের। তবে বিষয়টি সমাধানে জোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্খানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী। জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বামন্দী এইচডি থেকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের প্রাগপুর জিসি ভায়া মধুগাড়ি ঘাট সড়কের মাথাভাঙা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০সালের ২ ফেব্রুয়ারী। সেতুর ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৯ টাকা। সেতুটি নির্মাণের ফলে মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বাসিন্দারা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন হলেও আজো সংযোগ সড়ক নির্মান করা হয়নি। সেতুটি নির্মানের আগে স্থানীয়রা সংযোগ সড়কের জন্য জমি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর স্থানীয়রা বেঁকে বসেছেন। স্থানীয়দের দাবি, জমি সেতুর জন্য লাগলে দেবেন, তবে এর জন্য ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। তবে এলজিইডি বলছে, বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর দুই জেলার মানুষের জন্য তৈরি (মধুগাড়ি-বেতবাড়িয়া) সংযোগ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দৌলতপুর উপজেলার পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি হলেও গাংনী উপজেলার অংশে এখনো হয়নি। সেতু নির্মিত হলেও এখনো ভোগান্তি দূর হয়নি দুপাড়ের লক্ষাধিক মানুষের। ফলে চিকিৎসাসেবা কিংবা ফসলাদি নিয়ে এপারের মানুষকে ওপারে যেতে হলে ৯ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। মেহেরপুর গাংনী ভবানীপুর গ্রামের ইটভাটা ব্যবসায়ি ওয়াহিদুল হক লিটন জানান, তিনি নদী পার হয়ে মধুগাড়িতে যান ইটের ভাটায়। বছর দশেক ধরেই তিনি যাতায়াত করেন। সেসময় ঘাট ইজারা নিতেন স্থানীয়রা। তখন নৌকা ও ফরাস পাতা ছিল। প্রতদিন ১০ টাকার বিনিম যাতায়াত করতে পারতেন। সেতু নির্মানের পর ইজারদারী প্রথা আর নেই। এখন ৯ কিলোমিটার ঘুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। গাংনী এলাকার অংশে সংযোগ সড়কটি হলে সকলেরই উপকার হতো বলে তিনি জানান। মধুগাড়ির কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি মাইনুল হক জানান, বছর দশেক যাবত তিনি নদী পার হয়ে যাতায়াত করেন। নদীর উপর সেতু নির্মানের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও সেতু নির্মানের পর আর সেটি নেই। সংযোগ সড়ক না থাকায় কোন সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। একই কথা জানালেন, গরু ব্যবসায়ী মুল্লুক মালিথা। তিনি আরো জানান, ৩০ বছর ধরে গরু বেচা কেনা করেন তিনি। আগে নৌকা ছিল কিন্তু সেতু নির্মাণেন পর আর নৌকা চলে না। এখন গাংনী এলাকায় আসতে হলে ৮/৯ মাইল ঘুরে আসতে হয়। সবজি ব্যবসায়ি মধুগাড়ির রবিউল ইসলাম জানান, নদী পার হয়ে সবজি আনতে হয়। সংযোগ সড়ক সংযোগ না থাকায় সবজি বহনকারী ভ্যান রেখে মাথায় করে সবজি আনতে হয়। অতিদ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মানের দাবী জানান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, সেতুর নিচ দিয়ে তাদের প্রায় ৩৫ বিঘা জমি আছে। সেতু হলে মানুষের ভোগান্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জায়গাগুলোর দামও বেড়ে যাবে। তাই ন্যায্যমূল্য পেলে সেতুর সড়কের জন্য জমি দিতে আপত্তি নেই তাদের। গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, সেতু নির্মাণের আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। তবে বর্তমান সেতুর কাজ শেষ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গেলে যারা জমি দিতে চেয়েছিলেন তারা বর্তমানে আপত্তি জানাচ্ছেন। তারা বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দাম চাচ্ছেন। তাই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিগ্রহনের কার্যকলাপ শুরু হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।