০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিহত সাতজনই একই পরিবারের, যাচ্ছিলেন শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে

  • Update Time : ১২:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩
  • ২০০ Time View

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীতে বাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের সাতজনের প্রাণ গেছে। তারা সবাই অটোরিকশাযোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর এলাকায় এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে উক্ত মহাসড়কের উপজেলার ৩নং মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চারিয়া এলাকার বোর্ড স্কুলসংলগ্ন ইজতেমার মাঠের সমানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী, তিনটি শিশু ও একজন পুরুষ রয়েছেন। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীর চারিয়া এলাকায় বাস-সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করি। এরপর তাদের লাশ নাজিরহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের চারিয়া এলাকায় শহরগামী দ্রুতগতির পদক্ষেপ নামে যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ফটিকছড়িগামী অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশাটি অনেক দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। সিএনজির আরোহীরা রাস্তার উপর আছড়ে পড়েন। একই পরিবারের সাতজন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।

ফটিকছড়িগামী সিএনজি অটোরিকশাটি অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের সামনে পড়ে। বাসটির গতিও বেশি থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজির সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের ধোপাপাড়া এলাকার দুলাল মাস্টার বাড়ির মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী নারায়ণ দাশের স্ত্রী রিতা দাশ প্রকাশ মায়া (৩৫), তার চার সন্তান যথাক্রমে- শ্রাবন্তী দাশ (১৭), দ্বীপ দাশ (৫), দিগন্ত দাশ (৫), বর্ষা দাশ (১২)। এছাড়া ননী গোপাল দাশের কন্যা রিতার ননদ চিনু বালা দাশ (৫০) ও শম্ভু দাশের পুত্র রিতার ভাসুরের ছেলে বিপ্লব দাশ (২৭) মারা যান।

এছাড়া ওই দুর্ঘটনায় বাস এবং ছিটকেপড়া সিএনজির ধাক্কায় তিনজন পথচারী গুরুতর আহত হন। তারা হলেন- চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর ধোপাপাড়া দুলাল মাস্টার বাড়ির সুশীল দাশের পুত্র বাপ্পা দাশ (২৮), ফটিকছড়ির বারমাসিয়া বৈদ্যরহাট এলাকার নেপাল দের পুত্র বিপ্লব দে (২৪) ও নুরজাহান বেগম (৫৫)।

আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রশ্মি চাকমা। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত রিতার ভাসুর সুনীল দাস জানান, নিহত রিতা তার ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ফটিকছড়িতে তার বাপের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এক মাস আগে তার ঠাকুরদিদি পরলোকগমন করেছিলেন। মঙ্গলবার ছিল ওই ঠাকুরদিদির শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। তাই সকালে তারা গ্রামের বাড়ি থেকে একটি অটোরিকশাযোগে পটিয়ার মজ্জারটেক এলাকায় পৌঁছেন। সেখান থেকে ফটিকছড়ির নানুপুর পর্যন্ত একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করেন। এর মধ্যে ওই অটোরিকশাযোগে হাটহাজারী গেলে তারা দুর্ঘটনায় পতিত হন। তাদের নিহত হওয়ার ঘটনায এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন খান বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। এখানে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। হতাহতদের উদ্ধার কাজে প্রশাসনকে তিনি ও তার সহকর্মীরা সহযোগিতা করেছেন। দুর্ঘটনার চিত্র দেখে এলাকার মানুষ শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ওসি মো. আদিল মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। তারা একই পরিবারের সদস্য। চন্দনাইশ থেকে তারা সিএনজি অটোরিকশাযোগে ফটিকছড়ি উপজেলার দিকে যাচ্ছিল পরিবারটি। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘাতক বাসটির চালক পালিয়ে গেছে। দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে দুমড়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা ও ঘাতক বাসটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণে উক্ত মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান। এরপর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করার পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান

Tag :
জনপ্রিয়

মেহেরপুরের এক ইউপি সদস্যের মৃত্যু  

নিহত সাতজনই একই পরিবারের, যাচ্ছিলেন শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে

Update Time : ১২:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ নভেম্বর ২০২৩

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীতে বাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের সাতজনের প্রাণ গেছে। তারা সবাই অটোরিকশাযোগে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুর এলাকায় এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে উক্ত মহাসড়কের উপজেলার ৩নং মির্জাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চারিয়া এলাকার বোর্ড স্কুলসংলগ্ন ইজতেমার মাঠের সমানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী, তিনটি শিশু ও একজন পুরুষ রয়েছেন। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারীর চারিয়া এলাকায় বাস-সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করি। এরপর তাদের লাশ নাজিরহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের চারিয়া এলাকায় শহরগামী দ্রুতগতির পদক্ষেপ নামে যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ফটিকছড়িগামী অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশাটি অনেক দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। সিএনজির আরোহীরা রাস্তার উপর আছড়ে পড়েন। একই পরিবারের সাতজন ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।

ফটিকছড়িগামী সিএনজি অটোরিকশাটি অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে বাসের সামনে পড়ে। বাসটির গতিও বেশি থাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সিএনজির সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয়রা।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের ধোপাপাড়া এলাকার দুলাল মাস্টার বাড়ির মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী নারায়ণ দাশের স্ত্রী রিতা দাশ প্রকাশ মায়া (৩৫), তার চার সন্তান যথাক্রমে- শ্রাবন্তী দাশ (১৭), দ্বীপ দাশ (৫), দিগন্ত দাশ (৫), বর্ষা দাশ (১২)। এছাড়া ননী গোপাল দাশের কন্যা রিতার ননদ চিনু বালা দাশ (৫০) ও শম্ভু দাশের পুত্র রিতার ভাসুরের ছেলে বিপ্লব দাশ (২৭) মারা যান।

এছাড়া ওই দুর্ঘটনায় বাস এবং ছিটকেপড়া সিএনজির ধাক্কায় তিনজন পথচারী গুরুতর আহত হন। তারা হলেন- চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর ধোপাপাড়া দুলাল মাস্টার বাড়ির সুশীল দাশের পুত্র বাপ্পা দাশ (২৮), ফটিকছড়ির বারমাসিয়া বৈদ্যরহাট এলাকার নেপাল দের পুত্র বিপ্লব দে (২৪) ও নুরজাহান বেগম (৫৫)।

আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রশ্মি চাকমা। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত রিতার ভাসুর সুনীল দাস জানান, নিহত রিতা তার ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ফটিকছড়িতে তার বাপের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এক মাস আগে তার ঠাকুরদিদি পরলোকগমন করেছিলেন। মঙ্গলবার ছিল ওই ঠাকুরদিদির শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। তাই সকালে তারা গ্রামের বাড়ি থেকে একটি অটোরিকশাযোগে পটিয়ার মজ্জারটেক এলাকায় পৌঁছেন। সেখান থেকে ফটিকছড়ির নানুপুর পর্যন্ত একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করেন। এর মধ্যে ওই অটোরিকশাযোগে হাটহাজারী গেলে তারা দুর্ঘটনায় পতিত হন। তাদের নিহত হওয়ার ঘটনায এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন খান বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। এখানে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। হতাহতদের উদ্ধার কাজে প্রশাসনকে তিনি ও তার সহকর্মীরা সহযোগিতা করেছেন। দুর্ঘটনার চিত্র দেখে এলাকার মানুষ শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ওসি মো. আদিল মাহমুদ বলেন, এ ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। তারা একই পরিবারের সদস্য। চন্দনাইশ থেকে তারা সিএনজি অটোরিকশাযোগে ফটিকছড়ি উপজেলার দিকে যাচ্ছিল পরিবারটি। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ঘাতক বাসটির চালক পালিয়ে গেছে। দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে দুমড়ে যাওয়া সিএনজি অটোরিকশা ও ঘাতক বাসটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণে উক্ত মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান। এরপর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহ উদ্ধার করার পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানান হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান