চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাগলা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মইন উদ্দিন আহমদ মুন্টু সেতুর কাজ জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ধীরগতিতে চলছে। ফলে আশপাশের তিনটি ইউনিয়ন—দুর্লভপুর, মনাকষা ও বিনোদপুর—এর অন্তত দুই লাখ মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে।
নির্মাণাধীন সেতুর পাশেই রয়েছে একটি পুরোনো বেইলি ব্রিজ, যা বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে তিন বছর আগে কর্তৃপক্ষ ব্রিজটির প্রবেশমুখে ইটের পিলার স্থাপন করে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে দুর্লভপুর ও মনাকষার ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে ২০ কিলোমিটার ঘুরে কানসাট ব্রিজ ব্যবহার করতে হচ্ছে, এতে বহুগুণে বেড়েছে পরিবহন খরচ।
স্থানীয় ব্যবসায়ী দুর্লভপুরের মুদি দোকানদার শাহিন আলী জানান, শিবগঞ্জ বাজার থেকে তাঁর দোকানের দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার হলেও পণ্য আনতে তাঁকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়, ফলে ব্যয় বেড়েছে অনেক গুণ।
এছাড়াও বেইলি ব্রিজের স্টিলের পাটাতন একাধিকবার ভেঙে পড়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন তা সাময়িকভাবে মেরামত করে চলাচল সচল রেখেছে, তবে ব্রিজটি অত্যন্ত সরু ও জরাজীর্ণ হওয়ায় সারাদিন লেগে থাকে যানজট।
একবারপুর গ্রামের আল মোবাশ্বেরা ও শামসুন্নাহার জানান, জরুরি প্রয়োজনে জেলা শহরে যেতে গিয়ে যানজটে প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে ছিলেন। শেষমেশ তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শিবগঞ্জ শহরে পৌঁছান, কিন্তু যার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল, তিনি ততক্ষণে চলে গেছেন।
একই গ্রামের যুবক পিয়াস আলী বলেন, “এই দুর্ভোগ শুধু আমার একার নয়, তিন ইউনিয়নের সবাই প্রতিদিনই ভোগে।”মনাকষার জিয়াউল হক বলেন, “সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায় প্রতিদিন সেতুর এক প্রান্তে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে সময়, খরচ ও ভোগান্তি—সবই বাড়ছে।”এদিকে, নির্মাণ কাজের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর সেতু নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ১৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা। তবে দেড় বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ।জেলা এলজিইডি অফিস ২০২৪ সালের ৫ মার্চ স্মারক নম্বর ০১-২০২০৯১-২০৯২ অনুযায়ী, অধিগ্রহণকৃত জমি থেকে সাত দিনের মধ্যে ৭ জনকে সরে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তাঁরা এখনও সরে যাননি, বরং জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে সহযোগিতা চেয়েছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি-র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেতুর দুই পাশে ৩৪টি বসতবাড়ি উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দুইবার আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনও উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়নি।জানতে চাইলে ঠিকাদার আব্দুল মান্নান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সেতুর দুই পাশে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ ও উচ্ছেদ না হলে কাজ সম্পূর্ণ সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।”শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, “উচ্ছেদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দফতর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।”স্থানীয়দের দাবি, জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত জমি অধিগ্রহণ এবং বসতঘর উচ্ছেদ সম্পন্ন করে সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। অন্যথায় লাখো মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।