সাতদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া যখন পানিতে নিমজ্জিত। তখন একরাতে (১০ আগস্ট) উপজেলা সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে বিনা খরচে নরমাল ডেলিভারিতে ১০ নবজাতকের জন্ম লাভের কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ।
আর বন্যার দুর্দিনে প্রসূতি ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে নরমাল ডেলিভারি ১০ নবজাতকের জন্ম এবং মা-নবজাতকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছেন হাসপাতালের টিএইচও ডা. শোভন দত্ত নিজে।
চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল। তিনি বন্যার এই দুর্দিনে ঘরে থাকা সন্তান-সম্ভাবা স্ত্রীকে নিয়ে চরম দুশ্চিান্তায় ভুগছিলেন। এরই মধ্যে বুধবার সন্ধ্যার প্রসব যন্ত্রণা বেড়ে যেতে থাকে স্ত্রী জান্নাতুল মামুরীর। অন্যদিকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ির ভেতরের অংশ।
এই অবস্থায় যন্ত্রণায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন চকরিয়া উপজেলা সদরের দিকে। তাৎক্ষণিক টাকা পয়সাও জোগাড় করতে পারেনি মোস্তফা কামাল। তাতে কী। তবু স্ত্রীকে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। অনাগত সন্তানের নিরাপদ ডেলিভারি করতে তিনি সোজা চলে যান চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে।
মোস্তফা কামাল জানান, বুধবার রাতে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে কোনধরনের ঝামেলা ছাড়াই স্ত্রী জান্নাতুল মামুরীকে ভর্তি করাতে পেরেছেন। তাতে তিনি ও পরিবার সদস্যরা খুশি। প্রসূতি মামুরী ভর্তি হবার পর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডওয়াইফারি সুমাইয়া আক্তার ও নার্স শরীফা খাতুন যথারীতি শারীরিক সবধরনের চেকআপ ও রোগীর পরিচর্যা শুরু করেন। এরই মধ্যে রাত সাড়ে ১২টার দিকে জান্নাতুল মামুরী নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম দিয়েছেন জমজ নবজাতক।
এভাবে বন্যার দুর্যোগ দুর্দিনে বুধবার রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া আরো আটজন গর্ভবতী নারী নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম দিয়েছেন আরো আট নবজাতক। ১০ আগস্ট একরাতে প্রসূতি ওয়ার্ডে বিনা খরচে নরমাল ডেলিভারিতে ১০ নবজাতকের জন্ম লাভের এই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডওয়াইফারি সুমাইয়া আক্তার ও নার্স শরীফা খাতুন।
চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. শোভন দত্ত বলেন, পুরো চকরিয়া উপজেলা যখন অথৈ পানিতে নিমজ্জিত, তখন হাসপাতালের মেডিকেল টিম প্রস্তুত ছিলেন দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে। একইভাবে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডওয়াইফারি-নার্সরাও ছিলেন প্রসূতি রোগীদের সেবা নিয়ে। এরই অংশ হিসেবে ১০ আগস্ট একরাতে আমরা বিপদাপন্ন প্রসূতি রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে নরমাল ডেলিভারিতে ১০ নবজাতকের জন্ম লাভে সহায়তা দিয়েছি। এটি আমাদের কর্তব্যও বটে।
হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত মিডওয়াইফারি সুমাইয়া আক্তার বলেন, ১০ আগস্ট একরাতে জন্ম নেয়া নবজাতক ও সেবা দেওয়া প্রসূতি নারীরা হলেন- উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বাসিন্দা এরফান উদ্দিনের স্ত্রী তাহিয়া। তিনি ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। একই ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তফা কামালের স্ত্রী জান্নাতুল মামুরী। তিনি জন্ম দিয়েছেন জমজ মেয়ে।
উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহদ্দারকাটা এলাকার মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী শারমিন আক্তার। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে। সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর এলাকার আবদুর শুক্কুরের স্ত্রী রুবি আক্তার। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে।
চকরিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা এলাকার ইমনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে। মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তাক আহমদের স্ত্রী রিপাত আক্তার। তিনি জন্ম দিয়েছেন ছেলে।
চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী বুলবুল আক্তার। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে। লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমানের স্ত্রী আফসানা আক্তার। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে ও ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল হালিমের স্ত্রী জান্নাতুল নাঈম। তিনি জন্ম দিয়েছেন মেয়ে নবজাতক।
চকরিয়া হাসপাতালের টিএইচও ডা. শোভন দত্ত বলেন, নবজাতক ও প্রসূতি উভয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। শুক্রবার সবাই হাসিমুখে তাদের নবজাতক সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন