০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি দেশে মদ বিক্রিতে নতুন রেকর্ড কেরু, আয় ১৫২ কোটি

  • Update Time : ১২:৫৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০২৩
  • 105

দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এক বছরে মদ বিক্রি করে ১৫২ কোটি টাকা লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার মদ বিক্রি করেছে, যা কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এ তথ্য জানান।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার প্রুফ লিটার মদ উৎপাদন হয়েছে। মদ বিক্রি করে আয় হয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা প্রায়। রাজস্ব জমা দেওয়ার পর মদ বিক্রি থেকে নিট আয় দাঁড়ায় ১৫২ কোটি টাকা। অন্যান্য পণ্যের আয়-ব্যয় মিলিয়ে ও রাজস্ব দেওয়ার পর গত অর্থবছরে কেরুর নিট (প্রকৃত) মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা প্রায় ৩০ কোটি টাকা বেশি।

cats

দেশের বাজারে মদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ মদ উৎপাদন হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার প্রুফ লিটার মদ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৪২ হাজার প্রুফ লিটার বিলেতি মদ ও বাংলা মদ ৩২ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার উৎপাদন হয়। এছাড়াও ডিনেচার স্পিরিট, রেক্টিফাইড স্পিরিটসহ অন্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন হয়।

দেশের বাজারে মদ বিক্রি হয়েছে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার প্রুফ লিটার । মদ বিক্রি করে আয় হয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা প্রায়। রাজস্ব জমা দিয়েছে ১৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডিস্টিলারির লাভ হয় ১৫২ কোটি টাকা।

2

২০২১-২২ অর্থ বছরে ডিস্টিলারি বিভাগ মদ উৎপাদন করে ৫৩ লাখ ৭৯ হাজার প্রুফ লিটার। মদ বিক্রি হয় ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার প্রুফ লিটার। যার বাজারমূল্য ৩৬৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। রাজস্ব জমা দেয় ১১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ডিস্টিলারির লাভ হয় ১৩২ কোটি টাকা।

চিনি উৎপাদনের পর মোলাসেস পাওয়া যায়। মদ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল এই মোলাসেস (চিটাগুড়)। মোলাসেস কয়েকটি ধাপে প্রক্রিয়া করে মদ উৎপাদন হয়। ৯টি ব্যান্ডের বিলেতি মদ উৎপাদন হয় কেরুতে। সেগুলো হল- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।

cats

১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন মিলটি পরিচালনা করছে। কেরু এ্যান্ড কোম্পানির আওতায় রয়েছে চিনি উৎপাদন, ডিস্টিলারি, কৃষি খামার, পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানা।

চিনি কারখানা ছাড়া গত অর্থবছরে কেরুর প্রত্যেকটি ইউনিট লাভের মুখ দেখেছে। মিলটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন মাড়াই হওয়ায় চিনি উৎপাদন কম হয়েছে। আখ চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব না হলে চিনিকলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গত অর্থবছরে কেরু এ্যান্ড কোম্পানিতে মাত্র ৪২ কার্যদিবসে চিনি উৎপাদন হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। এসময় আখ মাড়াই হয় ৪৬ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। চিনি উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের হার ছিল ৫.০৮%। আখের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। গত অর্থবছরে চিনি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার। চিনিকলে লোকসান হয় ৬৮ কোটি ১৬ রাখ টাকা।

দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মিলটি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আখ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। মিলটি দেশের স্বার্থে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

mod

এমডি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, চিনিকলের লোকসান সমন্বয় করে গত অর্থবছরে ৮০ কোটি টাকা লাভ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আখ উৎপাদন ও মিলের উৎপাদন বাড়াতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আখের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কৃষি খামার ৩০ বছর পর লাভের মুখ দেখলো। একমাত্র চিনিকল ছাড়া সব ইউনিট লাভজনক। বর্তমানে ডিস্টিলারি ও চিনিকল ইউনিট আধুনিকায়নের কাজ চলছে।’

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, চলতি অর্থ বছরে ১০০ কোটি টাকার মুনাফ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।

Tag :
জনপ্রিয়

আলমডাঙ্গায় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি দেশে মদ বিক্রিতে নতুন রেকর্ড কেরু, আয় ১৫২ কোটি

Update Time : ১২:৫৮:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০২৩

দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এক বছরে মদ বিক্রি করে ১৫২ কোটি টাকা লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৩৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার মদ বিক্রি করেছে, যা কোম্পানির ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এ তথ্য জানান।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার প্রুফ লিটার মদ উৎপাদন হয়েছে। মদ বিক্রি করে আয় হয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা প্রায়। রাজস্ব জমা দেওয়ার পর মদ বিক্রি থেকে নিট আয় দাঁড়ায় ১৫২ কোটি টাকা। অন্যান্য পণ্যের আয়-ব্যয় মিলিয়ে ও রাজস্ব দেওয়ার পর গত অর্থবছরে কেরুর নিট (প্রকৃত) মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরের চেয়ে যা প্রায় ৩০ কোটি টাকা বেশি।

cats

দেশের বাজারে মদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ মদ উৎপাদন হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার প্রুফ লিটার মদ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৪২ হাজার প্রুফ লিটার বিলেতি মদ ও বাংলা মদ ৩২ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার উৎপাদন হয়। এছাড়াও ডিনেচার স্পিরিট, রেক্টিফাইড স্পিরিটসহ অন্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন হয়।

দেশের বাজারে মদ বিক্রি হয়েছে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার প্রুফ লিটার । মদ বিক্রি করে আয় হয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা প্রায়। রাজস্ব জমা দিয়েছে ১৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ডিস্টিলারির লাভ হয় ১৫২ কোটি টাকা।

2

২০২১-২২ অর্থ বছরে ডিস্টিলারি বিভাগ মদ উৎপাদন করে ৫৩ লাখ ৭৯ হাজার প্রুফ লিটার। মদ বিক্রি হয় ৫৪ লাখ ৪৮ হাজার প্রুফ লিটার। যার বাজারমূল্য ৩৬৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। রাজস্ব জমা দেয় ১১৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ডিস্টিলারির লাভ হয় ১৩২ কোটি টাকা।

চিনি উৎপাদনের পর মোলাসেস পাওয়া যায়। মদ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল এই মোলাসেস (চিটাগুড়)। মোলাসেস কয়েকটি ধাপে প্রক্রিয়া করে মদ উৎপাদন হয়। ৯টি ব্যান্ডের বিলেতি মদ উৎপাদন হয় কেরুতে। সেগুলো হল- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।

cats

১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন মিলটি পরিচালনা করছে। কেরু এ্যান্ড কোম্পানির আওতায় রয়েছে চিনি উৎপাদন, ডিস্টিলারি, কৃষি খামার, পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানা।

চিনি কারখানা ছাড়া গত অর্থবছরে কেরুর প্রত্যেকটি ইউনিট লাভের মুখ দেখেছে। মিলটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন মাড়াই হওয়ায় চিনি উৎপাদন কম হয়েছে। আখ চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব না হলে চিনিকলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিয়তার মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

গত অর্থবছরে কেরু এ্যান্ড কোম্পানিতে মাত্র ৪২ কার্যদিবসে চিনি উৎপাদন হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। এসময় আখ মাড়াই হয় ৪৬ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। চিনি উৎপাদন হয় ২ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন। চিনি আহরণের হার ছিল ৫.০৮%। আখের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। গত অর্থবছরে চিনি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকার। চিনিকলে লোকসান হয় ৬৮ কোটি ১৬ রাখ টাকা।

দর্শনা কেরু এ্যান্ড কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মিলটি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আখ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। মিলটি দেশের স্বার্থে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

mod

এমডি মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, চিনিকলের লোকসান সমন্বয় করে গত অর্থবছরে ৮০ কোটি টাকা লাভ হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আখ উৎপাদন ও মিলের উৎপাদন বাড়াতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আখের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কৃষি খামার ৩০ বছর পর লাভের মুখ দেখলো। একমাত্র চিনিকল ছাড়া সব ইউনিট লাভজনক। বর্তমানে ডিস্টিলারি ও চিনিকল ইউনিট আধুনিকায়নের কাজ চলছে।’

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, চলতি অর্থ বছরে ১০০ কোটি টাকার মুনাফ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।