শ্রীপুরে শিবলু হত্যার ঘটনায় সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর
শারীরিক ভাবে অক্ষম স্বামী ও দুইজন সন্তান নিয়ে একটি মাটির ঘরে বাস কুলসুম বেগমের। চার সন্তানের মধ্যে দুইজনকে বিয়ে দেওয়ার পর তারা অন্যত্র থাকছে।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া শিবলু (১৪) অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়ার পাশাপাশি মানুষের বাড়িতে কাজ করতো, কাজ করে নিজের পড়াশোনাসহ বাড়ির বিভিন্ন চাহিদা মেটাতো সে।
করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কাজ নিয়েছিল পাশের বাড়িতে।
সেই বাড়ীতেই গত [১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০] সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করে শ্রীপুর থানার এসআই মহসিন।
এ ঘটনার পরপরই বাড়ির সদস্যরা পালিয়ে যায়। পুলিশ লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনাটি এলাকায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হিসেবে প্রচার হয়। এমনকি থানায় অপমত্যু হিসেবে পুলিশ একটি মামলা রেকর্ড করে। যদিও প্রথম থেকেই কিশোরের পরিবারের অভিযোগ ছিল এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
ঘটনার পরই কয়েকজনকে অভিযুুক্ত করে কিশারের পরিবার শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা মামলা হিসেব রুজু করেনি। এরপর গাজীপুর আদালতে মামলা [সিআর নম্বর ১০৫৮] দায়ের করেন কুলসুম বেগম।
কিশার সাদিকুল ইসলাম শিবলু গাজীপুর জেলার শ্রীপুরর উপজেলার টেংরা গ্রামের রমজান আলীর সন্তান ও টেংরা নসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় আসামিরা হলেন, টেংরা গ্রামের মৃত ছফির উদ্দিনের সন্তান রওশন আরা (৪২), আব্দুর রশিদের সন্তান সোহেল মিয়া (৩২), রহিম মিয়ার স্ত্রী সাবেক ওয়ার্ড সদস্য রুনা (৪৫) ও সাহাব উদ্দিনের সন্তান নাসির উদ্দিন (৩৫)।
এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে কবর থেকে লাশ উঠিয়ে পূনরায় তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার [১৯ নভেম্বর ২০২০] দুপুরে একটি মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে আইনজীবী কাজী মাজেদুল আলম যোগফলকে বলেন, তদন্ত সংস্থার প্রতি অনাস্থা থাকলে তা লিখিতভাবে আদালতে জানাতে হবে। লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় পোস্টমর্টেমের আবেদনও আদালতেই করতে হবে।
ওই মানববন্ধনে শিবলুর মা কুলসুম বেগম জানান, আমার সংসারে উপার্জন করার মতো শিবলু ছাড়া আর কেউ নেই। আমার সোনার টুকরা ছেলে রওশন আরার বাড়িতে কাজ করতো। আমার ছেলেকে তারা মারার দুইদিন আগেও আমাকে বলছিল, রওশন আরা নেশা করে, সিগারেট খায়৷ আমার ছেলেকে দিয়ে শরীর মেসেজ করায়। আমি আর ওই বাড়িতে কাজ করবো না। তার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময়ও তার শরীরে মারধরের দাগ ছিল। তখন থানায় মামলা করতে চাইছিলাম, পুলিশ মামলা নেয়নি। পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে লেখা হয়েছে বৈদ্যুতিক শক খেয়ে মারা গেছে। তাদের টাকা আছে, তারা ওই সময় এক লাখ টাকা দিয়ে ঘটনা মীমাংসা করতে চেয়েছে। আমাদের টাকা চাই না, আমার ছেলের হত্যার ঘটনার বিচার চাই। তারা পুলিশ ও হাসপাতালে টাকা দিয়ে জাল পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বানাইছে, আমরা গরীব মানুষ, তাই আমাদের পক্ষে কেউ নাই। গরীবের কি বিচার পাওয়ার অধিকার নাই ?
আইনজীবী কাজী মাজেদুল আলম যোগফলকে বলেন, বিদ্যুতের শক আসামিরাও দিতে পারে। এটি তদন্ত শেষে জানা যাবে।
এ ব্যাপারে প্রধান অভিযুক্ত রওশন আরা জানিয়েছেন, শিবলু আমাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যে কাজ করতো। ওইদিন সে বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের বাড়িতে আসছিল, পরে সন্ধ্যার সময় কারেন্ট শক খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা শুনি। কিভাবে? বৈদ্যুতিক কোন ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে ? এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
শুক্রবার [২০ নভেম্বর ২০২০] রাতে এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার এসআই মহসিন জানিয়েছেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে যা আছে তাই, এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই, আমি একটু ব্যস্ত আছি, পরে বিস্তারিত কথা বলি।
স্মরণীয়: এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল, কিন্তু ভুক্তভোগীর পরিবার ওই মামলা প্রসঙ্গে কিছুই জানেন না। তারা বিচার না পেয়ে আদালতে মামলা করেছেন।