০৩:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাংগাইলে ৩৪ দিনের মাথায় নববধূর মৃত্যু

  • Update Time : ১২:২১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০
  • 73

টাংগাইলে ৩৪ দিনের মাথায় নববধূর মৃত্যু

সোলায়মান,নাগরপুর(টাংগাইল)থানা প্রতিনিধি

টাঙ্গাইল- দরিদ্র পরিবারে জন্ম নুর নাহারের (১৪)। অভাব অনটনের কারণে বাবা-মা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা তাকে নানার বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। এ বছর নুর-নাহার অষ্টম শ্রেণিতে ছিল। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্কুলে সুনামও ছিল। তার চোখে-মুখে কৈশোরের দুরন্তপনা। এখনও বোঝা হয়নি বিয়ে কি।

হঠাৎ করেই গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রবাস ফেরত ৩৫ বছর বয়সী রাজিব খান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে এই অপ্রাপ্ত বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে প্রবাসী হওয়ায় নুর-নাহারের পরিবার লোভ সামলাতে না পেয়ে তার হাতে তুলে দেয় মেয়েকে।

অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের কারণে নুর নাহারের রক্তক্ষরণ হয়। তারপরও থামেনি স্বামী রাজিবের পাষন্ডতা। এরপর গত শনিবার (২৪ অক্টোবর) নুর নাহার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কলিয়া বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুরনাহার। পড়ালেখায় ছিল মেধাবী। ছাত্রীর পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় মেয়েটি তার নানার বাড়ি উপজেলার কলিয়া গ্রামে থাকত।

সম্প্রতি উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে ৩৫ বছর বয়সী সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাস ফেরত রাজির খানের সঙ্গে বিয়ে হয় মেয়েটির। তবে মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়নি। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় বিয়ের পর থেকেই তার যৌ’না’ঙ্গে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

একপর্যায়ে নুরনাহারের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করান। রক্তক্ষরণ হলেও তার স্বামীর পাষণ্ডতা বিন্দু পরিমাণ কমেনি। পরে গত বৃহস্পতিবার তাকে টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়। ওই দিন ময়নাতদন্ত শেষে তার নানার বাড়ির স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে নুরনাহারের নানা লাল খান বলেন, ইতোপূর্বে মেয়েটির বিয়ের রাত থেকেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে জানিয়েছিল। এজন্য নুরনাহারের শাশুড়ি তাকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ খাওয়াচ্ছিল। পরে রক্তক্ষরণ বেশি হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় তার নানা লাল খান নুরনাহারের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজুর রহমান বলেন, নারীর প্রথম যৌনমিলনে ভয় ও আত’ঙ্ক কাজ করে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে রক্ত’ক্ষরণ হতে পারে। এজন্য দ্রুত গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল মতিন বলেন, পুলিশ অভিযোগটি তদন্ত করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

অবহেলা ও অপচিকিৎসায় মৃত্যু শিমুলের। ন্যায়বিচারের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন

টাংগাইলে ৩৪ দিনের মাথায় নববধূর মৃত্যু

Update Time : ১২:২১:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০২০

টাংগাইলে ৩৪ দিনের মাথায় নববধূর মৃত্যু

সোলায়মান,নাগরপুর(টাংগাইল)থানা প্রতিনিধি

টাঙ্গাইল- দরিদ্র পরিবারে জন্ম নুর নাহারের (১৪)। অভাব অনটনের কারণে বাবা-মা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা তাকে নানার বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। এ বছর নুর-নাহার অষ্টম শ্রেণিতে ছিল। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্কুলে সুনামও ছিল। তার চোখে-মুখে কৈশোরের দুরন্তপনা। এখনও বোঝা হয়নি বিয়ে কি।

হঠাৎ করেই গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রবাস ফেরত ৩৫ বছর বয়সী রাজিব খান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে এই অপ্রাপ্ত বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে প্রবাসী হওয়ায় নুর-নাহারের পরিবার লোভ সামলাতে না পেয়ে তার হাতে তুলে দেয় মেয়েকে।

অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের কারণে নুর নাহারের রক্তক্ষরণ হয়। তারপরও থামেনি স্বামী রাজিবের পাষন্ডতা। এরপর গত শনিবার (২৪ অক্টোবর) নুর নাহার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কলিয়া বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুরনাহার। পড়ালেখায় ছিল মেধাবী। ছাত্রীর পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় মেয়েটি তার নানার বাড়ি উপজেলার কলিয়া গ্রামে থাকত।

সম্প্রতি উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে ৩৫ বছর বয়সী সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাস ফেরত রাজির খানের সঙ্গে বিয়ে হয় মেয়েটির। তবে মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়নি। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় বিয়ের পর থেকেই তার যৌ’না’ঙ্গে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

একপর্যায়ে নুরনাহারের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করান। রক্তক্ষরণ হলেও তার স্বামীর পাষণ্ডতা বিন্দু পরিমাণ কমেনি। পরে গত বৃহস্পতিবার তাকে টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোরে তার মৃত্যু হয়। ওই দিন ময়নাতদন্ত শেষে তার নানার বাড়ির স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে নুরনাহারের নানা লাল খান বলেন, ইতোপূর্বে মেয়েটির বিয়ের রাত থেকেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে বলে জানিয়েছিল। এজন্য নুরনাহারের শাশুড়ি তাকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ খাওয়াচ্ছিল। পরে রক্তক্ষরণ বেশি হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় তার নানা লাল খান নুরনাহারের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজুর রহমান বলেন, নারীর প্রথম যৌনমিলনে ভয় ও আত’ঙ্ক কাজ করে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে রক্ত’ক্ষরণ হতে পারে। এজন্য দ্রুত গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল মতিন বলেন, পুলিশ অভিযোগটি তদন্ত করছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।