০৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয় কবি নজরুল মেলা সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

  • Update Time : ১২:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৮৩ Time View

সাজিদ হাসান, কার্পাসডাঙ্গা অফিস

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত কার্পাসডাঙ্গার মিশন পল্লীর আটচালা ঘর সংলগ্ন স্থানে কবি নজরুল মেলা ২০২৩ সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় দিনে কবি নজরুল মেলায় শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে কৃষিবিদ হামিদুর রহমানের সভাপতিত্বে মাওঃ আবদুল রশিদের কোরআন তেলায়তের মাধ্যম অনুষ্ঠান শুরু হয়, শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল স্মৃতি বিজরিত আটচালা ঘর মালিক প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল তিনি কবি নজরুল ইসলামের কার্পাসডাঙ্গায় আগমনের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তরুণ বয়সে অনেকবার এসেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদ কার্পাসডাঙ্গায়। তার স্মৃতিবিজড়িত খড়ের আটচালা ঘরটি এখনো সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঘরটি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। কবি যে এ ঘরেই অনেক দিন-রজনি কাটিয়েছেন, সে ব্যাপারে কারও দ্বিমত বা বিতর্ক নেই। তৎকালীন দামুড়হুদা উপজেলার ভৈরব নদের তীরবর্তী কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ার সরকার পরিবার ছিল জ্ঞান-গরিমায় বেশ সম্ভ্রান্ত। এ পরিবারের সন্তান শ্রী মহিম সরকার চাকরির সুবাদে থাকতেন কলকাতায়। কলকতা আমহার্স্ট স্ট্রিটে তিনি সপরিবারে বসবাস করতেন। মহিম সরকারের সঙ্গে কবি কাজী নজরুল ইসলামের খুবই সখ্য ছিল। তার বাড়িতে কবির আসা-যাওয়া ছিল আপনজনের মতো। তার দুই মেয়ে আভা রানি সরকার ও শিউলী রানি সরকার নজরুলগীতি চর্চা করতেন। তাদের গানের তালিম দিতেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজে। পরবর্তীতে আভা রানি সরকারের গানের রেকর্ডও বের হয়। প্রখ্যাত লেখক ড. আশরাফ সিদ্দিকী অনুসন্ধান করে নজরুলের কথা ও সুরে আভা রানি সরকারের ছয়টি গানের রেকর্ড-তথ্য পান।
একাধিক তথ্যসূত্রে জানা যায়, মহিম সরকারের পারিবারিক আমন্ত্রণে একাধিকবার কবি নজরুল কার্পাসডাঙ্গায় এসেছেন। তবে ১৯২৬ সালে ২৭ বছর বয়সে কবি সপরিবারে এখানে বেড়াতে আসেন। এ সময় প্রায় দুই মাস কার্পাসডাঙ্গায় অবস্থান করেন। তার সঙ্গে এসেছিলেন শাশুড়ি গিরিবালা, স্ত্রী প্রমীলা ও বড় ছেলে বুলবুল। তারা কলকাতা থেকে ট্রেনযোগে দর্শনায় নেমে ছয় মাইল গরুরগাড়িতে করে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। কবি কলকাতা এবং কৃষ্ণনগর থেকে কয়েকবার কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। কার্পাসডাঙ্গার বিপিন সরকার জানিয়েছেন, কবির সঙ্গে বসে তাস খেলেছেন তিনি। পারিবারিক আমন্ত্রণে কবি নজরুলের কার্পাসডাঙ্গায় আগমন ঘটলেও স্বদেশি আন্দোলন বেগবান করার জন্য অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছেন বলে জানা যায়। প্রয়াত দ্বারিক নাথ ওরফে তেরেন বাবুর ভাষ্যমতে, কার্পাসডাঙ্গা মিশন চত্বরে কয়েকটি ঝাউগাছ ছিল। সেই গাছে একদিন একটি বিষধর সাপ দেখতে পান দ্বারিক। সাপটিকে মেরে ফেলেন তিনি। পরে কবি বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন। ‘পদ্ম গোখরা’ নাটকের প্লট এখান থেকেই পান বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কার্পাসডাঙ্গায় অবস্থানকালে একটি আটচালা ঘরে তার থাকার জায়গা হয়। যে খাটে তিনি ঘুমোতেন, যে আলমারিটা তিনি ব্যবহার করতেন, তা আজও অক্ষত অবস্থায় আছে। কবির গুরুত্ব অনুভব করে তার স্মৃতি লালন করে আসছেন বংশপম্পরায় প্রকৃতি বিশ্বাস। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে মহিম সরকারের আমন্ত্রণে আসার পর এখানকার কংগ্রেস নেতা শিক্ষক হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের সঙ্গে ভাব জমে তার। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ছিলেন বর্তমান ভারতের শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ফলে শিক্ষিত মানুষ হিসাবে হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের সঙ্গে কবির বেশ খাতির জমে ওঠে। সেই সুবাদে আটচালা ঘরেই কবির থাকার জায়গা হয়।
আঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় এসময় কবি নজরুল মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মন্জু , বিশেষ অতিথি ছিলেন,চুয়াডাঙ্গা বিএমএ সভাপতি ডঃ মার্টিন হীরক চৌধুরী, গণউন্নয়ন গ্রন্থগারের পরিচালক আবু সুফিয়ান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাহিত্যানুরাগি আঃ মান্নান, নজরুল স্মতি সংসদের সভাপতি অবঃ সহকারী অধ্যাপক আঃ গফুর, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড.সন্দিপক মল্লিক, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশনের এজিএম আঃ হাকিম সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। বাংলার কবি ও কবিতা প্রেমী মানুষের এ মিলন মেলা বলে দেয় বাঙালি এক দেহ এক প্রাণ! অতিথিদের আলোচনা শেষে মেলায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী হা.. ডু..ডু ও দড়িটানা খেলার চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলের মধ্যো পুরস্কার বিতরণ করা হয় এরপর সন্ধ্যায় এপার বাংলা ওপার বাংলা কবিদের সম্মাননায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক ব্যবস্হাপনায় ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।

Tag :
জনপ্রিয়

ভালো মানুষ  —- রফিকুল ইসলাম 

কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয় কবি নজরুল মেলা সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

Update Time : ১২:২৭:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সাজিদ হাসান, কার্পাসডাঙ্গা অফিস

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত কার্পাসডাঙ্গার মিশন পল্লীর আটচালা ঘর সংলগ্ন স্থানে কবি নজরুল মেলা ২০২৩ সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় দিনে কবি নজরুল মেলায় শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে কৃষিবিদ হামিদুর রহমানের সভাপতিত্বে মাওঃ আবদুল রশিদের কোরআন তেলায়তের মাধ্যম অনুষ্ঠান শুরু হয়, শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল স্মৃতি বিজরিত আটচালা ঘর মালিক প্রকৃতি বিশ্বাস বকুল তিনি কবি নজরুল ইসলামের কার্পাসডাঙ্গায় আগমনের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তরুণ বয়সে অনেকবার এসেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদ কার্পাসডাঙ্গায়। তার স্মৃতিবিজড়িত খড়ের আটচালা ঘরটি এখনো সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ঘরটি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। কবি যে এ ঘরেই অনেক দিন-রজনি কাটিয়েছেন, সে ব্যাপারে কারও দ্বিমত বা বিতর্ক নেই। তৎকালীন দামুড়হুদা উপজেলার ভৈরব নদের তীরবর্তী কার্পাসডাঙ্গা মিশনপাড়ার সরকার পরিবার ছিল জ্ঞান-গরিমায় বেশ সম্ভ্রান্ত। এ পরিবারের সন্তান শ্রী মহিম সরকার চাকরির সুবাদে থাকতেন কলকাতায়। কলকতা আমহার্স্ট স্ট্রিটে তিনি সপরিবারে বসবাস করতেন। মহিম সরকারের সঙ্গে কবি কাজী নজরুল ইসলামের খুবই সখ্য ছিল। তার বাড়িতে কবির আসা-যাওয়া ছিল আপনজনের মতো। তার দুই মেয়ে আভা রানি সরকার ও শিউলী রানি সরকার নজরুলগীতি চর্চা করতেন। তাদের গানের তালিম দিতেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজে। পরবর্তীতে আভা রানি সরকারের গানের রেকর্ডও বের হয়। প্রখ্যাত লেখক ড. আশরাফ সিদ্দিকী অনুসন্ধান করে নজরুলের কথা ও সুরে আভা রানি সরকারের ছয়টি গানের রেকর্ড-তথ্য পান।
একাধিক তথ্যসূত্রে জানা যায়, মহিম সরকারের পারিবারিক আমন্ত্রণে একাধিকবার কবি নজরুল কার্পাসডাঙ্গায় এসেছেন। তবে ১৯২৬ সালে ২৭ বছর বয়সে কবি সপরিবারে এখানে বেড়াতে আসেন। এ সময় প্রায় দুই মাস কার্পাসডাঙ্গায় অবস্থান করেন। তার সঙ্গে এসেছিলেন শাশুড়ি গিরিবালা, স্ত্রী প্রমীলা ও বড় ছেলে বুলবুল। তারা কলকাতা থেকে ট্রেনযোগে দর্শনায় নেমে ছয় মাইল গরুরগাড়িতে করে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। কবি কলকাতা এবং কৃষ্ণনগর থেকে কয়েকবার কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। কার্পাসডাঙ্গার বিপিন সরকার জানিয়েছেন, কবির সঙ্গে বসে তাস খেলেছেন তিনি। পারিবারিক আমন্ত্রণে কবি নজরুলের কার্পাসডাঙ্গায় আগমন ঘটলেও স্বদেশি আন্দোলন বেগবান করার জন্য অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেছেন বলে জানা যায়। প্রয়াত দ্বারিক নাথ ওরফে তেরেন বাবুর ভাষ্যমতে, কার্পাসডাঙ্গা মিশন চত্বরে কয়েকটি ঝাউগাছ ছিল। সেই গাছে একদিন একটি বিষধর সাপ দেখতে পান দ্বারিক। সাপটিকে মেরে ফেলেন তিনি। পরে কবি বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন। ‘পদ্ম গোখরা’ নাটকের প্লট এখান থেকেই পান বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম কার্পাসডাঙ্গায় অবস্থানকালে একটি আটচালা ঘরে তার থাকার জায়গা হয়। যে খাটে তিনি ঘুমোতেন, যে আলমারিটা তিনি ব্যবহার করতেন, তা আজও অক্ষত অবস্থায় আছে। কবির গুরুত্ব অনুভব করে তার স্মৃতি লালন করে আসছেন বংশপম্পরায় প্রকৃতি বিশ্বাস। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে মহিম সরকারের আমন্ত্রণে আসার পর এখানকার কংগ্রেস নেতা শিক্ষক হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের সঙ্গে ভাব জমে তার। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাস ছিলেন বর্তমান ভারতের শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ফলে শিক্ষিত মানুষ হিসাবে হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের সঙ্গে কবির বেশ খাতির জমে ওঠে। সেই সুবাদে আটচালা ঘরেই কবির থাকার জায়গা হয়।
আঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় এসময় কবি নজরুল মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মন্জু , বিশেষ অতিথি ছিলেন,চুয়াডাঙ্গা বিএমএ সভাপতি ডঃ মার্টিন হীরক চৌধুরী, গণউন্নয়ন গ্রন্থগারের পরিচালক আবু সুফিয়ান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাহিত্যানুরাগি আঃ মান্নান, নজরুল স্মতি সংসদের সভাপতি অবঃ সহকারী অধ্যাপক আঃ গফুর, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড.সন্দিপক মল্লিক, বাংলাদেশ বন্ধু ফাউন্ডেশনের এজিএম আঃ হাকিম সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। বাংলার কবি ও কবিতা প্রেমী মানুষের এ মিলন মেলা বলে দেয় বাঙালি এক দেহ এক প্রাণ! অতিথিদের আলোচনা শেষে মেলায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী হা.. ডু..ডু ও দড়িটানা খেলার চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলের মধ্যো পুরস্কার বিতরণ করা হয় এরপর সন্ধ্যায় এপার বাংলা ওপার বাংলা কবিদের সম্মাননায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক ব্যবস্হাপনায় ছিলেন কার্পাসডাঙ্গা নজরুল স্মৃতি সংসদের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।