আকিমুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা থেকে :
বোরো ধান বীজের দাম কম হওয়ায় বীজ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা। ফলে মুখ থুবড়ে পড়বে বীজ সংগ্রহ কর্যক্রম। কৃষকরা ধান বীজ সরবরাহের শুরুতে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিয়েছিল দাম। এ মৌসুমে বীজ সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ কমিটি প্রত্যয়িত বোরো ধান বীজের দাম জাত ভেদে প্রতি কেজি ৪৮-৪৯ টাকা নির্ধারণ করায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। প্রতি কেজিতে কৃষকদের প্রায় ৫-৬ টাকা লোকসান গুনতে হবে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় বিএডিসি বোরো ধান বীজ সংগ্রহ করবে ৭৬৮০ মেট্রিক টন। বীজ সংগ্রহ সঠিক সময়ে সম্ভব না হলে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। বীজ সরবরাহ না থাকায় তিনটি অফিস এলাকায় শুনশান নিরবতা নেমে এসেছে। ১০ দিন বন্ধ রয়েছে বীজ সরবরাহ। তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে অফিসগুলো। প্রায় শতাশিক শ্রমিক বেকার বসে আছেন।
কৃষকদের দাবি, বীজের দাম বৃদ্ধি হলেই লোকসান কমানো সম্ভব। কর্তৃপক্ষ বলছে, চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। আর বীজ সরবরাহ কর্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কৃষকদের সাথে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় জেলায় কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স, অধিক বীজ ও বীজের আপদকালীন মজুদ কর্মসূচি অফিস চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে ধান বীজ সংগ্রহ করে। দাম নির্ধারণের শুরুতে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে। কিছুদিন ধান বীজ সরবরাহ করেছে চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা। বীজের মূল্য জানার পর কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ করেছেন। বীজ সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ কমিটি ১৯ জুন প্রতি কেজি বোরো জাতের ধান বীজের দাম নির্ধারণ করেছে ৪৮-৪৯ টাকা। কন্ট্রাক্ট গ্রোয়াস ৩৬০৫ মেট্রিক টন, অধিক বীজ ২৪৯৫ মেট্রিক টন ও বীজের আপদকালিন মজুদ ১৫৮০ মেট্রিক টন বোরো ধান বীজ সংগ্রহ করবে চলতি মৌসুমে।
কৃষকরা বিএডিসির নির্ধারিত জাতের বেশ কয়েকটি ধান চাষ করেন জমিতে। সেই ধান থেকে বীজ তৈরির পর বিএডিসিতে সরবরাহ করেন। ১ মণ ধান বীজে রুপান্তর করতে গিয়ে আদ্রতা, প্রসেসিং ওয়েষ্ট ও ধুলা-চিটা বাদ দিয়ে ৩২ কেজি হয়। প্রতি কেজি বীজ ধান প্রস্তুতে খরচ হয় ২ টাকার বেশি। কৃষকদের এক কেজি ধান বীজ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৫৩ টাকা। ৪৮-৪৯ টাকায় ধান বীজ সরবরাহ করলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠবেনা। তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। অন্য কৃষকরা বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১৫০০-১৬০০ টাকায়। ন্যায্য মূল্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ রাখবে।
বোরো ধান বীজের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ না হওয়ায় কৃষকরা ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স, অধিক বীজ ও বীজের আপদকালীন মজুদ কর্মসূচি অফিসে বীজ না আসায় কার্যক্রম সম্পর্ণ বন্ধ রয়েছে। কর্মব্যস্ততা না থাকায় অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। হুমকির মুখে পড়েতে পারে বোরো ধান বীজ সংগ্রহ।
বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষক আলগীর জানান, বছরের পর বছর আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ বিএডিসি ধান বীজের দাম স্বাভাবিকভাবে নির্ধারণ না করায় এ জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৪৮-৪৯ টাকা প্রতি কেজি। ১ কেজি ধান তৈরি করতে ৫৩ টাকা মত খরচ হয়। বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এক বস্তাও বীজ ধান যাবে না। ব্যাংক লোন নিয়ে ধান চাষসহ অন্য খরচ মিটাতে হয়। কেজিতে ৩-৪ টাকা বৃদ্ধি করতে হবে।
শ্রমিক আলতাফ, সুমন, মিলন রবিউল জানান, তিনটি অফিসে আমরা শতাধিকের বেশি শ্রমিক কাজ করি। কাজ বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছি। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজ ধান না আসা পর্যন্ত আমাদের কোন কাজ শুরু হবে না। আমরা চাই সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক।
চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজতকরণ কেন্দ্রর যুগ্ন পরিচালক এ এফ এম শফিকুল ইসলাম জানান, বীজ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল তিনটি অফিসে। বিএডিসি দাম নির্ধারন করার পর থেকে কৃষকরা ধান সরবরাহ করা বন্ধ রেখেছে বলে শুনেছি। আমাদের কোন হাত নেই এখানে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাবো। পরিস্থিতি দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম বনি ইয়ামিন (এল এল এম- ইবি)
প্রধান সম্পাদক মোঃ আব্দুল্লাহ হক
অক্সফোর্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড