চুয়াডাঙ্গার কৃষকেরা বোরো ধান কাটা শুরু করেছে। তীব্র তাপদাহের মধ্যে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস মাথায় নিয়েই মাঠে মাঠে ধান কাটার তোড়জোড় চলছে।
এবার অনাবৃষ্টি আর অতি তীব্র তাপদাহের কারণে বোরো ফলনে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কৃষকদের কপালে পড়েছে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ।
যখন বোরো ধান মাঠে, ঠিক তখনই চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ছিল ৪০ থেকে ৪৩ ডিগ্রির ঘরে। সে সময় ক্ষেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পাওয়ায় ধানের ক্ষতি দেখা দেয়।
আবার ধান কাটার সময়ে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে মাঠের ধান ঘরে তুলেছেন।
আবার অনেকেই ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কৃষকেরা জানান, এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করতে খরচ হয় ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সেচ খরচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি হওয়াতে এক বিঘা ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৭ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি জমিতে ধান উৎপাদন হয় ২৫ মণ। এবছর আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কারণে ধানে খরচ হয়েছে অনেক। কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের ফলনও হচ্ছে না। সবমিলিয়ে বিঘা প্রতি এবার ২০ মণ ধান হবে কিনা সন্দেহ আছে।
মাঠ ঘুরে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা গাইদঘাট গ্রামের কৃষক নওশাদ আলি তার এক বিঘা জমিতে চাষ করা বোরো ধান কাটছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া আর তীব্র তাপদাহে নওশাদের ধানে চিটাসহ আরও অনেক ধরনের ক্ষতি দেখা দিয়েছে। এই কৃষকের মতো জেলার প্রায় সব কৃষকদেরই এবার বোরো মৌসুমের ধানে ক্ষতি হয়েছে।
কৃষক নওশাদ আলি বলেন, এবার বোরো ধান চাষ করে সবই লোকসান। এখান থেকে এবার একটুও লাভ করতে পারবো না। খরচ হয়েছে অনেক, সে পরিমাণ ধান ঘরে তুলে আমাদের কিছুই থাকবে না মনে হয়। এবার রোদ গরমের কারণে ধানে পানি পাওয়া যায়নি। তাই ফলনও ভালো হয়নি। ধান ঘরে তোলা ও মজুরি খরচ দিয়ে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হবে না বলে মনে হচ্ছে।
অপর কৃষক জামসেদ মোল্লা বলেন, একদিকে তীব্র গরম আর অতি তাপদাহ। এর মধ্যে আমরা ধান কাটছি। অনেক গরমের মধ্যে কপালে ধোঁয়াশা নিয়ে ধান কাটছি। এবার বিঘা প্রতি যে পরিমাণ ধান পাওয়ার দরকার সেই পরিমাণ পাব না। আবার যেই পরিমাণ বৃষ্টি হওয়া দরকার সেই পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। আর লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার হেক্টর বেড়ে তা অর্জন হয়েছে ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত এই জেলায় বোরো ধান কাটা পড়েছে ৫০ শতাংশ।
এ বিষয়ে জেলা সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, ধান মাঠে থাকা অবস্থায় তীব্র খরায় কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে পানির অভাব পূরণ করেছেন চাষিরা। ধান কাটার সময়ে আবার ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে। তাই কৃষকদের দ্রুত ফলন ঘরে তোলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম বনি ইয়ামিন (এল এল এম- ইবি)
প্রধান সম্পাদক মোঃ আব্দুল্লাহ হক
অক্সফোর্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড