দামুড়হুদা অফিস: বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় কর্মরত এ এস আই মামুনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার নির্দেশ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। গতকাল বুধবার সকালে ওয়াললেছ সেটে ক্লোজের নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য থাকে যে,দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই মামুনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। থানায় আরও পুলিশ সদস্য আছে, কিন্তু কারো বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কোন অভিযোগ না তুললেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় জনসাধারণ। অভিযোগের বাদির কাছ থেকেই জোর পূর্বক নেওয়া হচ্ছে টাকা, দিতে রাজি না হলেই হুমকি ধামকি ও দেখানো হচ্ছে জেল খাটানোর ভয়।
মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করা, জোর পূর্বক ঘূষ দাবী করা এবং ঘুষ আদায় করা, গভীর রাতে সাধারণ মানুষের বাড়িতে গিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করা তার নিত্যদিনের কাজ।
জানাগেছে দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই মামুন তিনি থানায় যোগদান করার পর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ তার নামে অভিযোগ তুলেছে। এরকমই একজন দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর হাজী পাড়ার আ: রাজ্জাক এর স্ত্রী বলেন, হঠাৎ গত শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে এএসআই মামুন আমার বাড়িতে আসে। এসেই আমার ছেলে রাজু’র নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করে। কেনো ডাকছেন এবং আপনারা কারা জানতে চাইলে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে। আমার মেয়ের বাচ্চা হয়েছে, সে শিশু বাচ্চা কে বুকের দুধ পাণ করাচ্ছিল, হুটোপাটা করে তার ঘরে প্রবেশ করে। এতো বিশ্রি ভাষায় গালাগালি করে যে মুখে প্রকাশ করার মত নয়। আমাদের ঘরের সবকিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজে যখন কিছু পায় না তখন বলে রাজুর পাসপোর্ট কোথায়? রাজুর পাসপোর্ট দে। অনেকক্ষণ যাবৎ পাগলের মত অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করার এক পর্যায় আশপাশের প্রতিবেশীরা এসে আমার বাড়িতে হাজির হয়। তারা সবাই যখন জানতে চাই কেন আপনি এমন করছেন তখন বলে রাজুর নামে অভিযোগ আছে। জয়রামপুর মালিথাপাড়ার রবিউল ইসলাম তোর ছেলের নামে অভিযোগ করেছে। প্রতিবেশীরা তখন বলে রবিউল ইসলাম তো আমাদের এলাকায় চিহ্নিত একজন মাদক ব্যবসায়ী। সে বলে ওসব আমি জানিনা এখনই ছেলে হাজির কর, না হলে কিন্তু কপালে খুব দুঃখ আছে। সকলের সামনে এত খারাপ খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করছিল যে প্রতিবেশীরাই ওই পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খবর দেবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন আমি বলি আপনার বাড়িতে কি মা বোন নেই আপনি আমাদের সাথে এমন কেন করতেছেন, মনে হচ্ছে শত জনমের শত্রুতা আছে আপনার সাথে। ঐ পুলিশ আমার স্বামীর কাছে ফোন করে উল্টাপাল্টা বলে ঘুষ দাবি করে, টাকা না দিলে ছেলের সমস্যা আছে। আমার স্বামী ড্রাইভারি করে, জীবিকার তাগিদে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকে। তখন আমার স্বামী ওই পুলিশের জন্য ১ হাজার টাকা পাঠায়। তখন আমি আমার ভাস্তে হাসান কে দিয়ে ঐ পুলিশের কাছে ১ হাজার টাকা পাঠায়।
এবিষয়ে উপজেলার জয়রামপুরের নিয়ামত মোল্লার ছেলে হাসান আলী বলেন, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে মাদক ব্যবসা করতে অনেকবার বারণ করেছি। তারপরেও সে মাদক ব্যবসা বন্ধ না করাই দামুড়হুদা মডেল থানায় আমি নিজে বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগটির তদন্তের ভার পড়ে এএসআই মামুনের হাতে, সে আমার দায়ের করা অভিযোগ টি আমলে না নিয়েই মাদক ব্যবসায়ীর পক্ষে সাফাই গাই। আমাকে অনেক মানুষজনের সামনে বিভিন্নভাবে মান অপমান করে। আমার কাছে ঘুষ দাবি করে। আমাকে খুব চাপ সৃষ্টি করে পরে আমি বলি স্যার আমি অসুস্থ বেকার বসে আছি কয়েক দিন পরে আমি দেবোনি। তারপরে রাজু’র আব্বা টাকা পাঠালে আমি রাজু’র বাবদ
ঐ পুলিশকে ০১৭০৬৫৪৬৫৬৩
নাম্বারে ১০০০ টাকা বিকাশ করি। সে আরো ৫০০ টাকা দাবি করে। সমস্ত কিছু কথাবার্তা আমার মোবাইল ফোনে রেকর্ডিং করা আছে। আমি গতকাল সোমবার নিজে এএসআই মামুন এর বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর কবির স্যার কে মৌখিক ভাবে বিষয় টি জানায়।
এ বিষয়ে উপজেলা সদরের খাঁ পাড়ার সুমাত আলী বলেন, কয়েকদিন আগে দামুড়হুদা মডেল থানার গোল ঘরে এএসআই মামুন আমাকে নিয়ে একটি বিচার বসাই। ওই একই বিচার থানায় এর আগেও অনেক বার হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা না পেলে অভিযোগটির প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে ডেকে নিষ্পত্তি করে দেয়। কিন্তু এএসআই মামুন আমার কোনো কথাই শুনেনা। কোন কাগজ পত্রও দেখেনা, একেবারে কোন কিছু না শুনে না বুঝেই উপস্থিত অনেক লোকজনের সামনে পাশে থাকা চেয়ার দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে আমাকে রক্তাক্ত জখম করে। উপস্থিত লোকজন আমাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আমি মাথায় এবং চোখে গুরুতর আহত হয়।
একজন এএসআই এর এমন উদ্ধতপূর্ণ আচরণে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানী বলেন, গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে
জয়রামপুর কাঠাল তলায় সাঈদের চায়ের দোকানে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি অপারেশন শফিউল আলম, সেকেন্ড অফিসার এসআই শেখর চন্দ্র মল্লিক, এসআই সালাউদ্দিন সহ বেশ কিছু পুলিশ অফিসারের নামে প্রকাশ্যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলে উপস্থিত লোকজন ফুঁসে ওঠে। এত বিশ্রী ভাষায় কথাবার্তা বলেছে যে সেসব কথা মানুষের সামনে বলাই যায় না। তার কাছে কোন অফিসারের টাইম নাই। এ সকল কথাবাত্রা উপস্থিত লোকজন সকলেই দেখেছে এবং শুনেছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই মামুনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ এর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আলমগীর কবির।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম বনি ইয়ামিন (এল এল এম- ইবি)
প্রধান সম্পাদক মোঃ আব্দুল্লাহ হক
অক্সফোর্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড