শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজধানীর নয় থানায় ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির ৬২৮ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪৯ জনকে।
এদিকে ১১ মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৩৭ নেতাকর্মীকে রোববার আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে ১২২ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
অন্য ২৫ আসামির প্রত্যেককে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ আদেশ দেন। আসামিরা প্রত্যেকে বিএনপির নেতা-কর্মী।
সূত্র জানায়, শনিবারের সহিংসতার ঘটনায় আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন। এখন পর্যন্ত দায়ের করা মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায় ছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য নেতাদের আসামি করা হয়নি।
ধোলাইখালে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতারের পর রোববার আজাদকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সূত্রাপুর থানার মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদসহ পাঁচজনকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আজাদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপর চার আসামির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার তিন মামলায় ৩৩ জন, দারুস সালাম থানার এক মামলায় ৫২ জন, কদমতলী থানার এক মামলায় ২ জন, শ্যামপুর এক থানার মামলায় ২ জন ও বংশাল থানার এক মামলায় ৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার দুই মামলায় ১৬ জনের একদিনের রিমান্ড ও দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া উত্তরা পূর্ব থানায় দুই মামলায় ২২ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আটজনের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে ১৪ আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সূত্রমতে জানা যায়, শনিবারের ঘটনায় এ পর্যন্ত যত মামলা হয়েছে সবগুলোর বাদীই পুলিশ। কদমতলী থানায় করা মামলায় বিএনপির ৭০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। মাতুয়াইলে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এ মামলা হয়।
যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলায় ১০৯ জন করে আসামি করা হয়েছে। এই থানা এলাকায় বাস পোড়ানোর ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুম্মন হোসেনের নামও রয়েছে। মামলায় অভিযোগ এনে বলা হয়, আসামিরা অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এ মামলা দুটি করা হয়। একটিতে ১৪ জন এবং অন্যটিতে ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই থানায় আরও দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উত্তরা পূর্ব থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি যথাক্রমে ৩৪, ৩৫ এবং ৩১ জন। একটি মামলায় গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন সরকারের নাম রয়েছে। বিমানবন্দর থানায় করা মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। কেবল ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সূত্রাপুর এবং বংশাল থানায় করা পৃথক মামলায় ২৫ জন করে নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ধোলাইখাল এলাকায় সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। এছাড়া দারুস সালাম থানায় দায়ের করা মামলায় ৫২ জন এবং ডেমরা থানার মামলায় ১০৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নবী উল্লাহ নবীর নাম রয়েছে।
রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোববারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এ পর্যন্ত ১৪৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শনিবার বিএনপি যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তাতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া ছিল না। তারা বেআইনি সমাবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে, বাস ভাঙচুর করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়। এসব অপরাধে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। যেসব আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি তাদের ধরতে ডিবি, বিভিন্ন ক্রাইম ডিভিশনের টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের অনেককে অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে দেখা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে ফারুক হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। তারপর বিএনপি যখন ভাঙচুর করে সে সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের এলাকায় অবস্থান করেছিল। আমাদের পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের কার্যক্রমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এদিকে রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ঢাকার প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শনিবারের সহিংসতার ঘটনায় সাত শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে সহিংসতায় যাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এখন সব জায়গাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, আমরা সেগুলোর সাহায্য নিচ্ছি। জনগণ এ ধরনের দুষ্কৃতকারীদের ধরিয়ে দিচ্ছে। অনেক সময় পুলিশের নজর এড়িয়ে গেলেও জনগণ তাদের ধরে এনে আমাদের সামনে দিচ্ছে, তাদেরও আমরা ধরছি, কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: এম বনি ইয়ামিন (এল এল এম- ইবি)
প্রধান সম্পাদক মোঃ আব্দুল্লাহ হক
অক্সফোর্ড মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড