০৫:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে কৃষক আ ত্মহ ত্যার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা 

 

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত থাকলেও, দুঃখজনকভাবে দেশের অর্থনীতির এই মূল চালিকাশক্তি অর্থাৎ কৃষকদের পেশাগত সুরক্ষা দেওয়ার কোনো আইনি কাঠামো এখনও তৈরি হয়নি। বীজ বপন থেকে শুরু করে বাজারে ফসল বিক্রি করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কৃষককে হয়রানির শিকার হতে হয়। এর ফলস্বরূপ, ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে এবং মানসিক হতাশা থেকে অনেক কৃষক আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশাকেই তুলে ধরছে।

 

 

 

 

সংবাদপত্র খুললেই “ঋণের দায়ে কৃষকের আত্মহত্যা”র মতো শিরোনাম এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং এটি আমাদের কৃষি ব্যবস্থার গভীর সংকটেরই পরিণতি। সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, সংগ্রহ এবং বাজারে বিক্রি—সব ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত নজরদারি ও অবকাঠামোর অভাবে মধ্যস্বত্বভোগীরা অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এর ফলে কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোতে ঋণ ব্যবস্থার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে কৃষকেরা বাধ্য হয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক চড়া সুদের ঋণের দ্বারস্থ হন। এভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে অনেকে সহায়-সম্বল হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন, আর অনেকেই চূড়ান্ত হতাশায় আত্মহননের পথ বেছে নেন।

 

 

 

 

কৃষকদের এই দুরবস্থা দূর করতে এবং আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিরোধে অবিলম্বে একটি কৃষি কমিশন গঠন করা এবং খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। একটি কৃষি কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হলে তা কৃষকের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি ও নীতিগত কাঠামো তৈরি করতে পারবে। এই কমিশন কৃষি উৎপাদন, সরবরাহ শৃঙ্খলা, মূল্য নির্ধারণ, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ, এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও পদক্ষেপ গ্রহণে মূল ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে, খাদ্য অধিকার আইন কার্যকর করা হলে তা কেবল দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, বরং কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির আইনি ভিত্তি তৈরি করবে, যা তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনধারণের অধিকার নিশ্চিত করবে। এই দুটি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলেই কৃষকদের পেশাগত সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে এবং ঋণের বোঝা ও হতাশার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে তারা আত্মহত্যার পথ পরিহার করতে পারবেন।

 

 

 

 

Rising Trend of Farmer Suicides in Agricultural Bangladesh

Tag :
জনপ্রিয়

চুয়াডাঙ্গায় শীতের আগমন: কার্তিকের শেষে তাপমাত্রা ১৫.৮° সেলসিয়াস।

বাংলাদেশে কৃষক আ ত্মহ ত্যার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা 

Update Time : ০৩:১১:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

 

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত থাকলেও, দুঃখজনকভাবে দেশের অর্থনীতির এই মূল চালিকাশক্তি অর্থাৎ কৃষকদের পেশাগত সুরক্ষা দেওয়ার কোনো আইনি কাঠামো এখনও তৈরি হয়নি। বীজ বপন থেকে শুরু করে বাজারে ফসল বিক্রি করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কৃষককে হয়রানির শিকার হতে হয়। এর ফলস্বরূপ, ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে এবং মানসিক হতাশা থেকে অনেক কৃষক আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশাকেই তুলে ধরছে।

 

 

 

 

সংবাদপত্র খুললেই “ঋণের দায়ে কৃষকের আত্মহত্যা”র মতো শিরোনাম এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং এটি আমাদের কৃষি ব্যবস্থার গভীর সংকটেরই পরিণতি। সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন, সংগ্রহ এবং বাজারে বিক্রি—সব ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত নজরদারি ও অবকাঠামোর অভাবে মধ্যস্বত্বভোগীরা অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এর ফলে কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না। অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোতে ঋণ ব্যবস্থার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে কৃষকেরা বাধ্য হয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক চড়া সুদের ঋণের দ্বারস্থ হন। এভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে অনেকে সহায়-সম্বল হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন, আর অনেকেই চূড়ান্ত হতাশায় আত্মহননের পথ বেছে নেন।

 

 

 

 

কৃষকদের এই দুরবস্থা দূর করতে এবং আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা প্রতিরোধে অবিলম্বে একটি কৃষি কমিশন গঠন করা এবং খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি। একটি কৃষি কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হলে তা কৃষকের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী আইনি ও নীতিগত কাঠামো তৈরি করতে পারবে। এই কমিশন কৃষি উৎপাদন, সরবরাহ শৃঙ্খলা, মূল্য নির্ধারণ, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ, এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও পদক্ষেপ গ্রহণে মূল ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে, খাদ্য অধিকার আইন কার্যকর করা হলে তা কেবল দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না, বরং কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির আইনি ভিত্তি তৈরি করবে, যা তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনধারণের অধিকার নিশ্চিত করবে। এই দুটি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলেই কৃষকদের পেশাগত সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে এবং ঋণের বোঝা ও হতাশার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে তারা আত্মহত্যার পথ পরিহার করতে পারবেন।

 

 

 

 

Rising Trend of Farmer Suicides in Agricultural Bangladesh