নারায়ণগঞ্জ, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ (সংবাদ সংস্থা): নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা এবং পেশায় শিক্ষক গাজী সালাউদ্দীন, যিনি জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, অবশেষে তার আহত শরীর নিয়ে হার মানলেন। চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্রদের উপর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে তিনি শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দেন এবং আন্দোলনকালে স্প্লিন্টারের আঘাতে গুরুতরভাবে জখম হন।
এই বীর যোদ্ধা রবিবার রাত দশটার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার সকাল দশটায় সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল বাজার এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুর সংবাদটি সামাজিক মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধ। তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “জুলাই শহীদের তালিকায় যুক্ত হলো আরও একটি নাম। এই তালিকা কবে থামবে—কেউ জানে না। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
মীর স্নিগ্ধ আরও জানান যে, এই আহত যোদ্ধা গুলিতে তার একটি চোখ হারিয়েছিলেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্প্লিন্টার বিঁধেছিল। এর মধ্যে গলায় আটকে থাকা একটি স্প্লিন্টার অপসারণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। চিকিৎসকদের মতে, সেই স্প্লিন্টার থেকেই সৃষ্ট শ্বাসকষ্টে শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান।
নিহত সালাউদ্দীনের পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেন যে, জুলাই আন্দোলনের সময় তার চোখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলির স্প্লিন্টার আঘাত করেছিল। গলায় বিঁধে থাকা স্প্লিন্টারটির কারণে সৃষ্ট শ্বাসকষ্টই তার মৃত্যুর কারণ।
গাজী সালাউদ্দীনের ছেলে রাতুল তার বাবাকে সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “ওনি দেশের জন্য জীবন দিলেন। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গাজী সালাউদ্দীন ছিলেন সামনের সারির যোদ্ধা। স্প্লিন্টারের আঘাতে তার ডান চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং বাম চোখের দৃষ্টিও আংশিকভাবে কমে যায়। দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কারণে তিনি দীর্ঘদিন বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। পরবর্তীতে, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পুনর্বাসন কর্মসূচির অধীনে সিদ্ধিরগঞ্জে তার এলাকায় তাকে একটি মুদি দোকান চালু করে ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান আব্দুল্লাহ আল আমিন জানান, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি সত্ত্বেও গাজী সালাউদ্দীন লড়াই চালিয়ে গেছেন। অল্প কিছুদিন আগেই তিনি জীবনটা নতুন করে শুরু করার আশায় মুদি দোকানটি পেয়েছিলেন।





















